সিনিয়র প্রতিবেদক :
নদী ভাঙনের কবলে নিশ্চিহ্নের পথে চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের দুইটি গ্রাম।ভাঙন ধসে নিপতিত দুই গ্রামের অন্তত আড়াই হাজার পরিবার।
জানা যায়, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাঙ্গু নদী বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। এরইমধ্যে প্রাকৃতিক কারণে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশঝাড় ও ঘরবাড়িসহ অনেক স্থাপনা চলে গেছে সাঙ্গু নদীর পেটে।
ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় আগামী বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
ওদিকে, জুইদন্ডী ইউপি নির্বাচন ২০২১ এর নির্বাচনের জন্য হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও পুনর্গঠন না করা অবধি নির্বাচন স্থগিত রাখার জন্য কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে একাধিক জনপ্রতিনিধি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার সর্ব-দক্ষিণে সাঙ্গু নদী দিয়ে ঘেরা জুঁইদণ্ডী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের উত্তরে বটতলী ইউনিয়ন; পূর্বে বরুমছড়া ইউনিয়ন ওসাঙ্গু, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়ন ও সাধনপুর ইউনিয়ন; দক্ষিণে সাঙ্গু নদী ও বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে রায়পুর ইউনিয়ন ও খানখানাবাদ ইউনিয়নের অবস্থান।
স্থানীয়দের পক্ষে মো. ওসমান জানায়, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার মাঝখান দিয়ে সাঙ্গু নদী প্রবাহিত। প্রাকৃতিক কারণে উপজেলার ২নং সাধানপুর, ৩নং খানখানাবাদ ও ১নং পুকুরিয়া ইউনিয়নের অনেকাংশে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।
১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের সাথে মিলে একাকার হয়েছে। জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড নদীগভে বিলিন হয়ে গেছে।
বিষয়টি ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করলে এলজিইডি তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ১১নং জুইদন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র বাঁশখালী উপজেলার বৈলগাও মৌজায়। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭০০। অপরদিকে ৮নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৮৭০। যা সুস্পষ্টভাবে স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ধারা ১৩(১) পরিপন্থী বলে জানা যায়। সম্প্রতি করোনার ওমিক্রন প্রভাব ও ভাঙনের বিষয়টি আমলে নিলে নির্দেশ আসতে পারে নির্বাচন না করার।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, নদী ভাঙনের ফলে জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীঁয় সরকার বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।’
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর পর ৩১ জানুয়ারি ইউনিয়নটিতে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে জুঁইদন্ডিও তফসিল ঘোষণা করেন। এই ইউনিয়নে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ৫ জুলাই।
উপজেলা নির্বাচন অফিস ও ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ হয়ে স্ব স্ব প্রার্থীরা মাঠে প্রচার প্রচারণায় নেমেছে ও ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে ৩১ জানুয়ারি।
জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল শুকুকুর বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে সব সময় সিদ্ধান্ত দেন নির্বাচন কমিশন। তফসিল যেহেতু হয়েছে আমার মনেহয় নির্বাচন হতেও পারে। মামলা কিংবা অন্য কোন কারণে নির্বাচন বন্ধের চিঠি আসলে আবার যেকোন সময় বন্ধ হতে পারে। এতে কোন সন্দেহ নেই।’
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদী ভাঙনে দুটি গ্রাম বিলীন হওয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় লোকজন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি সাথে সাথে বিষয়টি ঢাকা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। বাদ বাকি সিদ্ধান্ত কমিশনের। কমিশন এখনো নির্বাচন বন্ধ রাখার কোন নির্দেশ প্রদান করেনি। সুতরাং আদালতের আদেশ/ কমিশনের নির্দেশ পেলে হয়তো বন্ধও হতে পারে। তবে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলে জুঁইদণ্ডীতে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী ওই সময় সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। গত ৯ নভেম্বর মামলা খারিজ করে নতুন তফসিলে নির্বাচনের রায় ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।