ইসলাম ডেস্ক :
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় রোকন। ঈমানের পরে ইসলামের প্রধান ইবাদতও এটি। প্রাপ্ত বয়স্ক সব মুসলমানের ওপর প্রতিদিন নির্ধারিত ৫ সময় নামাজ পড়া ফরজ। পরকালে সর্বপ্রথম নির্ধারিত এই নামাজেরই হিসাব নেওয়া হবে। যারা নামাজের হিসাব দিতে পারবে তাদের পরবর্তী সব হিসাবও সহজ হয়ে যাবে। তবে একাগ্রতা বা মনোযোগের সঙ্গে নামাজ পড়তে হবে। নামাজে একাগ্রতা তথা মনোযোগ ধরে রাখতে কী করবেন?
নামাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য মনোযোগ ধরে রাখার বিকল্প নেই। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমরা সেভাবে নামাজ পড়; যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখেছ।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)
নামাজে মনোযোগী হওয়ার জন্য ভালোভাবে অজু করার বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে আল্লাহর স্মরণে সুন্দরভাবে অজু সম্পন্ন করবে তার নামাজও হবে সুন্দর এবং উত্তম। তারপর-
১. স্থির মনোভাব
নামাজের জন্য অজু করতে যাওয়ার সময়ই এ মনোভাব পোষণ করা যে, আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য অজুর করছেন। আর মনকে এ চিন্তা-চেতনায় তৈরি করা যে, নামাজ শুধু আল্লাহর জন্য। সুতরাং নামাজের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু ব্যতিত নামাজ পড়বে, তার নামাজ কবুল হবেনা।’
২. প্রতি ওয়াক্তের জন্য নতুনভাবে অজু করা
একাধিক ওয়াক্ত নামাজ এক অজুতে না পড়ে প্রতি ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুনভাবে অজু করায় নিবিড় মনোযোগ তৈরি হয়। যদিও ‘অজু ভাঙার কোনো কারণ সংঘটিত না হলে’ এক অজুতেই একাধিক নামাজ আদায় করা যায়। তবে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য সুন্নাত হলো নতুনভাবে অজু করা। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের জন্য আলাদা অজু করতেন আর আমরা একই অজু দিয়ে অনেক নামাজ আদায় করতাম।।’
৩. মেসওয়াক করা
অজুর সময় মেসওয়াক করার প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি না আমার উম্মতের জন্য এটি কষ্টকর মনে করতাম, তবে প্রতি নামাজের সময় তাদেরকে মেসওয়াক করার জন্য নির্দেশ দিতাম।’
৪. দোয়া পড়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি পরিপূর্ণভাবে অজু করার পর নিচের দোয়াটি পড়ে-
اَشْهَدُ ان لاَ اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ
উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুল্লাহ’
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতিত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
তাঁর জন্য (এ দোয়াটি যে পাঠ করবে তাঁর জন্য) জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে এবং তাঁর ইচ্ছেমত যে কোনো দরজা দিয়েই সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’
হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে পারলেই কেবল বান্দার নামাজ হবে স্বার্থক এবং সফল। এ নামাজ তাদেরকে অন্যায় থেকে বিরত রাখবে। হাদিসে এসেছে-
‘নিশ্চয়ই নামাজ সব অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’
এরপর নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা আনতে নামাজে যা পড়া হয়, তা হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করা। নামাজে পঠিত সুরা এবং দোয়াগুলোর অর্থ বুঝে পড়াও জরুরি। কেননা না বুঝে কোনো কাজ করলে তা গুরুত্বহীন মনে হয়। আর গুরুত্বহীনতার কারণে মানুষের মনের একাগ্রতাও নষ্ট হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। পরকালে সহজে নামাজের হিসাব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।