মানসিক অবসাদ কাটাতে রাতে যা করবেন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আপনার অফিস আপনার রিপ্লেসমেন্ট পাবে, কিন্তু আপনার পরিবার পাবে না। স্ট্রেস বা মানসিক অবসাদের জন্য যারা চরম সিদ্ধান্ত নেন, তাদের মানসিকভাবে চাঙা করার টিপস দিলেন মনোবিদ অরুন্ধতী দাস। অফিসের স্ট্রেস কমাতে যা যা করা উচিত, সেসব জানালেন তিনি।

অফিসে কাজের চাপ, স্ট্রেস— সেই বিষয়গুলো এখনকার দিনে যেন একেবারেই ‘কমন’ হয়ে উঠেছে। সেই মানসিক চাপের পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটির প্রমাণ একাধিকবার মিলেছে। তারপরও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি বলে মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ করেন মনোবিদরা। আর এরই মধ্যে দিনকয়েক আগে বিশ্বের প্রথমসারির একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কলকাতা শাখার উচ্চপদস্থ এক কর্তার মৃত্যুর ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে প্রবল চাপ এবং স্ট্রেসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

অনেকের মতে, অফিসের স্ট্রেস একটা ভয়ঙ্কর স্তরে পৌঁছে গেছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের সেই স্ট্রেস কীভাবে কাটাবেন, কী করতে হবে, তা নিয়ে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’য় আলোচনা করলেন মনোবিদ অরুন্ধতী দাস। কীভাবে স্ট্রেস কাটিয়ে উঠতে পারবেন, কীভাবে জীবনটা রঙিন হয়ে উঠবে, তা নিয়ে একাধিক টিপসও দিলেন।

সেই রেশ ধরে যে কোনো ‘ট্রিটমেন্ট’ শুরুর আগে যেমনভাবে স্বীকার করে নিতে হয় যে, কিছু একটা সমস্যা আছে— সেটির ওপরেই জোর দিয়েছেন অরুন্ধতী। অর্থাৎ চাকরি করলে বা কাজ করলে যে চাপ থাকবেই, সেটি কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়ার বা লুকোছাপা করার কোনো ব্যাপার নেই। আর সেটি মাথায় রেখেই নিজেকে প্রস্তুত হতে হবে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন মনোবিদ।

অফিসের জীবন সব নয়, জোর দিন পার্সোনাল লাইফেও

মনোবিদ অরুন্ধতী দাস বলেন, কর্মক্ষেত্রের চাপটা অবশ্যম্ভাবী। সেটি আসবেই। কিন্তু অফিসের জীবনকেই যদি আমি সব ধরে নিই, যদি মনে করি যে, আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো মূল্য নেই, তা হলে আমাদের মাথায় স্ট্রেস চেপে বসতে বাধ্য। আমাদের ব্যালেন্সটা শিখতে হবে, যাতে প্রফেশনাল লাইফ এবং পার্সোনাল লাইফের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। পেশাদার জীবনে যদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাহলে ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব পড়বেই। সেটার জন্য আমাদের নিজেদের ছোট-ছোট উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, এখন সব অফিসেই মনোবিদ থাকা উচিত। অফিসের বাইরেও অনেকেই মনোবিদের সাহায্য নিতে পারেন। কিন্তু সারাজীবন মনোবিদের ওপরে নির্ভর করে কাটিয়ে ফেলব, সেটিও ঠিক নয়। সেই পরিস্থিতিতে কিছুটা নিজেকেও উদ্যোগ নিতে হবে। কখনো হয়তো মারাত্মক স্ট্রেসের মধ্যে পড়ে গেছেন, তা হলে কয়েকটা এক্সারসাইজ রয়েছে। সেগুলো করলে তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্রেস কিছুটা কমে। এই যেমন—

১. কানের মধ্যে আঙুল রেখে ক্লক-ওয়াইজ ঘোরাতে পারেন। ৩০-৪০ সেকেন্ড করতে হয়। তা হলে স্নায়ুতন্ত্র সচল হয়। কমে উদ্বেগ।

২. চোখের সঞ্চালন বা আই মুভমেন্ট। একবার ডান দিকে করতে হয়, আরেকবার বাঁদিকে করতে হয় চোখ।

৩. ডিপ ব্রিথিং টেকনিক আছে। অল্প শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখা। সাত-আট সেকেন্ড পরে নিশ্বাস ছাড়া। তাতেও উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কিছুটা কমে যায়।

এ ছাড়া হাঁটাহাঁটির ওপরে জোর দিয়েছেন মনোবিদ অরুন্ধতী দাস। তিনি জানিয়েছেন, অনেকেই সারাদিন বসে বসে কাজ করেন। তাদের কিছুটা হলেও এক্সারসাইজ করা উচিত। আর সব থেকে ভালো এক্সারসাইজ হলো হাঁটাচলা করা। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলে ভালো হয়। যেদিন যেদিন সুযোগ থাকছে না, সেদিন অফিসে পৌঁছে লিফটে না গিয়ে হেঁটে উঠতে পারেন। এবার ১৬ তলায় অফিস হলে পুরোটাই উঠতে হবে না। পাঁচতলা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে বাকিটা লিফটে করে যেতে পারেন।

এ ছাড়া সর্বোপরি নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিদ অরুন্ধতী দাস। তিনি বলেছেন, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। লাঞ্চ টাইমে ঠিক করে খাবার খেতে হবে সবাইকেই। যদি একান্ত সময় না থাকে, তাহলে নিদেনপক্ষে কিছুটা খেয়ে নিতে হবে। কোনো ব্রেক হলেই সিগারেট খেতে চলে গেলাম, সেটি করলেই স্ট্রেস বাড়বে। সেসব স্বভাব ছেড়ে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ার ওপরে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সেই সঙ্গে যারা প্রবল চাপে আছেন, তাদের মানসিকভাবেও চাঙা হতে হবে। অরুন্ধতী দাস বলেন, একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। আপনার মৃত্যু হলে অফিস একজন রিপ্লেসমেন্ট পেয়ে যাবে। কিন্তু আপনার পরিবার বা প্রিয়জনরা রিপ্লেসমেন্ট পাবে না। যা যাওয়ার, পরিবারেরই যাবে। তাই বার্ন-আউট যাতে না হন, সেই চেষ্টা করতে হবে। নিজের কথা ভাবতে হবে। পরিবারের কথা ভাবতে হবে। একটা জিনিস বুঝতে হবে, আমি যত বেশি স্ট্রেস মুক্ত থাকব, তত ভালো কাজ করতে পারব। যত স্ট্রেস বাড়বে, তত নিজের কাঙ্ক্ষিত ফলটা পাব না। ভালো হবে না কাজটা। এই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।

এ মনোবিদ বলেন, কর্মক্ষেত্রে যদি স্ট্রেস হয়, তা হলে অবশ্যই অফিসে জানানো উচিত। তা ছাড়া নিজের মনের কথাগুলো নিজের বন্ধু, পরিবার বা স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। মনের মধ্যে একা গুমরে থাকবেন না। প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। শরীরের হাড় ভেঙে গেলে তো ডাক্তারের কাছে যান। মন ভেঙে গেলে তা হলে কেন মনোবিদের কাছে যাবেন না? এখনো সমাজে ট্যাবু আছে। কিন্তু সেই ট্যাবুর জন্য তো নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না।

আর সেই সঙ্গে প্রত্যেককে বুঝতে হবে, তিনি যে জীবনটা পেয়েছেন, সেটি অনেকেই পান না বলে জানিয়েছেন মনোবিদ। তিনি বলেন, জীবনটা যে কতটা দামি, সেটা নিজেকে বোঝাতে হবে। সেই কাজটা রোজ করতে হবে প্রত্যেককে। তার কাছে যারা পরামর্শের জন্য আসেন, তাদের সেই কাজটা আবশ্যিকভাবে করতে বলেন বলেও জানিয়েছেন অরুন্ধতী।

প্রতিদিন ডায়েরি লেখার পরামর্শ দিয়ে এ মনোবিদ বলেন, দিনের যে কোনো সময় বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় নিজের জন্য ৫-১০ মিনিট বের করে লিখে রাখুন যে আজ সারাদিন কী কী পেলাম বা আমার পরিকল্পনা কী। আমার জীবনে কী কী আছে, সেটি লিখে রাখুন। জীবনে যে ইতিবাচক দিকগুলো আছে, সেগুলো রাখুন। নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো।

সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলি যে, একটা ডায়েরি রাখুন। দিনের শেষে তাতে লিখে রাখুন যে, কোন তিনটি জিনিসের জন্য আজ আপনি কৃতজ্ঞ। কেউ লিখতে পারেন যে, আমার একটা চাকরি আছে। কেউ আবার লিখতে পারেন, আমার মাথার ওপরে ছাদ আছে, আমার পানি আছে, আমার খাবার আছে। এ রকমভাবে লিখে রাখতে পারেন। সেটা সবার কাছে থাকে না কিন্তু।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.