যে মুরগির একটি ডিম কিনতে গুনতে হবে ১৬শ’ টাকা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মুরগি বা চিকেন খাবার হিসেবে প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয়। দামও মানুষের অনেকটা নাগালের মধ্যে। তবে মুরগির ঝোল কিংবা ঝাল ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন বা রোস্ট যেভাবেই পাখি প্রজাতির এই প্রাণীটির মাংস খাওয়ার কথা ভাবতে পারেন একজন সাধারণ বাংলাদেশি, তাতে কালো মুরগির কথা ভাবেন না প্রায় কেউই। কারণ খুব সাধারণ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে কালো মুরগি পরিচিত নয়। কিন্তু এই কালো মুরগিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুরগি। আর যে মুরগিই এত দামি তার ডিমতো ১৬শ’ টাকা দাম হবেই।

এবার তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই মুরগির মূল্যটা জেনে নিন। এই এক মুরগির দাম নাকি কয়েক লাখ টাকা। শুনে চোখ কপালে ওঠার মতোই অবস্থা। না, আপনি ভুল পড়েননি। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দীপে বেড়ে ওঠে বিরল এই মুরগির নাম আইয়াম চিমানি। আইয়াম অর্থ মুরগী আর চিমানি মানে সম্পূর্ণ কালো। বাস্তবে এই মুরগি দেখতে একদমই কালো। এই মুরগির হাড়, মাংস, এমনকি জিহ্বা-সবই কালো। শুধুমাত্র রক্ত অন্যান্য প্রাণীর মতোই লাল। তবে কেনো এই মুরগির সব অঙ্গপ্রতঙ্গ কালো? বিজ্ঞানীরা বলেন, ফাইব্রোমেলানোসিস নামের জেনেটিক মিউটেশন থেকে এই মুরগির রং কালো হয়ে থাকে। অন্যান্য জাতের মুরগির গায়ের রঙের জন্য শুধুমাত্র কয়েকটি কোষ দায়ী। আর আইয়াম চিম্যানির পুরোপুরি কালো হওয়ার পেছনে কারণ হলো এর প্রায় সব কোষের পিগমেনটেশন।

যুক্তরাষ্ট্র, চায়না, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নানা মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার এই মুরগি সংগ্রহ করেন। অনেকে এর বাচ্চা কিনে লালন পালন করেন। পুরো মুরগি কালো হলেও এই মুরগির ডিম কিন্তু কালো নয়। সাধারন ডিমের মতোই এর রঙ। ইন্দোনেশিয়ায় এই মুরগীর সর্বোচ্চ দাম দুই হাজার থেকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় যা ছয় লাখ টাকার বেশি। প্রতিটি ডিমের দাম ১৬ ডলার যা ১৬০০ টাকার বেশি।

ইন্দোনেশিয়ার বাইরে একেক দেশে একেক দামে বিক্রি হয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রে যদিও আইয়াম চিম্যানি ২০০০ থেকে ৩০০০ ডলারে বিক্রি হয়। তবে ভালো মানের মুরগি ৯ থেকে দশ হাজার ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে ভালো মান বোঝা যায় মুরগির মুখ ও জিহ্বা কতটা কালো তা দেখে। যত কালো তত ভালো। খুবই শান্ত ও অনুগত স্বভাবের এই মুরগীর এতো বেশি দামের মূল কারণ মূলত এর মাংস। চর্বিহীন এই প্রাণীর মাংসের স্বাদ জাদুকরী।

সাধারণ মুরগির মাংসের চেয়ে এই মাংসে আছে অনেক বেশি প্রোটিন। যার কারণে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ এটি অনেক বেশি পছন্দ করেন। এছাড়াও ভিটামিন এ ডি ই, আয়রন ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টিগুণ আছে এতে। আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি র‌্যরডিকেলের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। শুধুমাত্র খাবার হিসেবেই নয় এই মুরগির বিভিন্ন অংশ ওষুধ ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হয়। ইন্দোনেশিয়ানদের অনেকে এটিকে দামী পোষা প্রাণী হিসেবে বাড়িতে পুষে থাকেন। ইন্দোনেশিয়ায় এই মুরগিটি মোটামুটি পরিচিত হলেও, অন্যান্য দেশে এগুলো হাজার হাজার ডলারে বিক্রি হয়। এটি স্পোর্টস চিকেন নামেও বিখ্যাত।

প্রাণীটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, কালো রঙের কারণে এরা সুপারন্যাচারাল ক্ষমতার অধিকারি এবং পৃথিবীব্যাপী বিচরণ করতে পারে। এই মুরগির প্রথম ডিম খেলে সন্তানধারণ হয় বলেও স্থানীয়দের বিশ্বাস। তবে কোনো দম্পতি চাইলে প্রথম ডিমটি টাকা ছাড়াই তাদের দিয়ে দেন ইন্দোনেশিয়ানরা। বিভিন্ন ওষুধের কাজে এই মুরগি ব্যবহার করা হলেও তার নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। এটি অসুস্থ্য হলে কালো রঙ ধীরে ধীরে বিবর্ণ হতে শুরু করে। তাই এই মুরগিকে সুস্থ্য রাখতে হলে অবশ্যই খুব সাবধানে এবং যত্ন সহকারে লালন পালন করতে হয়। সাধারণত ৬ থেকে ৮ বছর বাঁচে এই প্রাণী। এই মুরগির পালনও বেশ কষ্টসাধ্য এবং জটিল। এরজন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি মুরগির সঠিক জোড়া। সঠিক জোড়া না হলে তাদের মাধ্যমে অন্য জাতের মুরগির জন্ম নিতে পারে। যার রঙ কালো না হয়ে সাদা কিংবা অন্য রঙেরও হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.