বেলা বিস্কুট! চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এবং উপমহাদেশের প্রথম বিস্কুট, যা সারা বাংলাদেশ জুড়ে জনপ্রিয়। ১৫০ বছর ধরে জনপ্রিয় বেলা বিস্কুট চট্টগ্রামের মানুষসহ অনেকের বিকেলের চায়ের সঙ্গী।
জানা যায়, বিশিষ্ঠ সওদাগর লাল খাঁ সুবেদার ও তাঁর ছেলে কানু খাঁ মিস্ত্রির হাত ধরে বেকারি পণ্য তৈরির সূচনা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে। মূলত, পর্তুগিজদের আগ্রহেই চট্টগ্রামে বেকারিশিল্পের আগমন ঘটে ।কথিত আছে এই লাল খাঁ সুবেদারের পরবর্তী বংশধর আব্দুল গণি সওদাগর পর্তুগিজদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৭৮ সালে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম বিস্কুট তৈরির প্রচলন ঘটান । এই বিস্কুটের নাম রাখা হয় ‘ বেলা বিস্কুট ‘ যা আজও সারাদেশে সমানভাবে জনপ্রিয় ।
আবদুল গণির পূর্বপুরুষদের এই বেকারি পণ্য তৈরির ব্যবসা থাকলেও তখন সেভাবে নাম ছিল না। পূর্বপুরুষের হাত ধরে ১৮৭৮ সালে বেকারিশিল্পে যুক্ত হন আবদুল গণি সওদাগর। ১০৫ বছর বয়সে ১৯৭৩ সালে মারা যান তিনি। তার আগে ১৯৪৫ সালের ৮ অক্টোবর ওয়াক্ফ করে যান তিনি। সে অনুযায়ী এই বেকারির হাল ধরেন আবদুল গণির ভাইয়ের ছেলে দানু মিঞা সওদাগর। তিনি মারা যাওয়ার পর ১৯৮৭ সালে তাঁর ছেলে জামাল উদ্দিন হাল ধরেন। জামাল উদ্দিন মারা যাওয়ার পর হাল ধরেন তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ এহতেশাম।
আরও পড়ুন: বায়েজিদ বোস্তামি দরগাহ’র বোস্তামি কাছিম
বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে এখনকার ক্রেতারাও বংশ পরম্পরায় বেলা বিস্কুটের গ্রাহক । এ কারণে হয়তো এ দীর্ঘসময় ধরে বেলা বিস্কুটের জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি। বেলা বিস্কুট তৈরীতে তারা এখনো সেই পুরাতন পদ্ধতিকে অনুসরণ করে থাকে। আধুনিক বেকারির মতো ওভেনে তৈরী না করে বেলা বিস্কুট এখনও মাটির তৈরী তন্দুরে বানানো হয়। তন্দুরে বানালে বিস্কুটের আসল স্বাদ ও গুণগত মান বজায় থাকে।
এক সময় চট্টগ্রামে শুধু গণি বেকারিতে বেলা বিস্কুট তৈরি হলেও এখন নগরীর বিভিন্ন বেকারি প্রতিষ্ঠান বেলা বিস্কুট বিক্রি করে থাকে। চট্টগ্রামের এই বেলা বিস্কুটের খ্যাতি, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।