নাটোরে ভারত সরকারের অর্থায়নে স্থাপন করা হচ্ছে হাই-টেক পার্ক। রোববার (২৪ জুলাই) হাই-টেক পার্কের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। এ সময় ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে জেলা পর্যায়ে আইটি পার্ক স্থাপন প্রকল্পের আওতায় জেলার সিংড়া উপজেলার শেরকোলে এ আইটি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ৯ দশমিক ২৮ একর জমির উপরে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ পার্ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করবে। আগামি দু’বছরের মধ্যে পার্কের নির্মান কাজ শেষ হবে। পার্কটি চালু হলে প্রতিবছর এক হাজার তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষন গ্রহণ এবং প্রত্যক্ষভাবে ৩ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হাই-টেক পার্কে ষ্টিল স্ট্রাকচারের সাত তলা মাল্টিটেনেন্ট ভবন, তিন তলা ডরমেটরি ভবন, একটি সিনেপ্লেক্স ভবন ও খেলার মাঠ থাকছে। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী এ কম্পাউন্ডে একটি অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স এবং ডরমেটরি ভবনের ফলক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ , আইসিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ, নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এবং পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন পরবর্ত্তী সিংড়া উপজেলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব এবং ডিজিটাল আর্কিটেক সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধান ও পরামর্শে প্রযুক্তির উদ্ভাবনী সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এখন আর বাংলাদেশ শ্রম ঘন অর্থনীতির দেশ নয়, তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ একটি দেশ। কায়িক পরিশ্রমের জন্যে কষ্টকর প্রবাস জীবন নয়, তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহন করে এদেশের তরুণ-তরুণীরা ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছেন। তথ্য প্রযুক্তি খাতে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি খাতে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে বাংলাদেশ।
পলক বলেন, ‘প্রযুক্তি নির্ভর মেধাবী উন্নত দেশ গড়তে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তারুণ্যের অফুরান শক্তিতে প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি এবং মাইক্রো প্রসেসর নিয়ে কাজ করছে দেশের প্রযুক্তি খাত। আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মেধাভিত্তিক শীর্ষ প্রযুক্তির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। আর এই লক্ষ্য পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সততা, সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই’।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি এবং আবহাওয়া একই। আমরা দুই দেশের মানুষের চলমান বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের এক হাজার ৯৮৪ সেনা সদস্যের জীবন উৎসর্গসহ ভারতের অসামান্য অবদানকে এদেশের মানুষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে’।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, নাটোর আইটি পার্কটি উচ্চপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসস্পদ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শুরু থেকেই অভিন্ন ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এই বন্ধন আগামীদিনে আরও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১২টি জেলায় হাই-টেক পার্ক স্থাপন কার্যক্রমে বিনিয়োগসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ-ভারত। এসব পার্ক স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এদেশের তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও উন্নত হবে এবং অর্থনৈতিক অংশীরারিত্ব জোরদার হবে।