চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সরকারি বিধি নিষেধ উপক্ষোসহ প্রশাসনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বসানো হয়েছে গরু-ছাগলের হাট। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। নেই প্রশাসনের তেমন নজরদারী, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন অমান্য করে এ জে চৌধুরী কলেজ মাঠেও বসেছে পশুর হাট।
সরেজমিনে হাটে গেলে দেখা যায়, কারো মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দুরত্ব বজায় নেই, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এভাবেই উপজেলার কলেজ মাঠে চলছে গরু-ছাগলের হাট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধের কথা প্রচার থাকলেও হাটের ইজারাদারেরা সেই সব বিধিনিষেধ অমান্য করে হাট বসিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন কলেজ বাজারে হাট বসানোর অনুমতি প্রদান করে সপ্তাহে দুদিন (শনি ও মঙ্গলবার)। ফকিরনিরহাটে দুদিন (রবি ও বুধ), ফাজিলখাঁর হাটে দুদনি (বৃহস্পতিবার ও সোমবার) এবং মইজ্জ্যারটেক সিডিএ আবাসিকে বসবে ১০ দিন। কিন্তু দু’দিনের ইজারাদারেরা বেশ আয়োজন করে মাইকিং করছে ১০দিন (২৪ ঘন্টা) গরু-ছাগলের হাট বসানো হয়েছে। ফলে, গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাচ্ছে ওই হাটে। গরুর হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই গাদাগাদি করে ক্রেতারা ভিড় করছেন। গরুর হাটকে কেন্দ্র করে বাজারে হোটেল ও চায়ের দোকানগুলো লোকারণ্য হয়ে আছে। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় এলাকাবাসীরাও আতঙ্কিত। হাটের বিষয়টি সকলের জানা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
ওদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাট বসানো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন কলেজ মাঠে গরুর হাট বসার অনুমতিও দেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কোনো ধরনের গরুর হাট বসা নিষেধ রয়েছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছে বলেও প্রচার রয়েছে।
কর্ণফুলীর শিকলবাহা এরশাদ জানান, ইউএনও জনস্বার্থে কলেজমাঠে গরুর হাট বসার অনুমিত দিয়েছেন। কিন্তু গরুর হাটে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কেউ কারও কথা শুনছেন না। রহমান আলী নামে আরেক ব্যক্তি জানান, পুলিশ গরুর হাটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু কেনাবেচা করার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু গরুর হাটে ১০-২০ হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা। কে কার কথা শোনে, সবাই গরু কেনা নিয়ে ব্যস্ত।
কলেজ বাজার পশুর হাটের ইজারাদার মোঃ সাইফুদ্দীন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এখন বাজারে কোন পশু কেনাবেচা হচ্ছে না। কলেজ বাজারের গরুর হাট বসবে মূলত শনি ও মঙ্গলবার। এখন যেগুলো আছে এসব আমাদের নিজস্ব গরু । বাহিরের কোন গরু নেই।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুকান্ত সাহা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাটে বেচাকেনা করার জন্য ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেদিন বাজার বার শুধুমাত্র ঐদিনেই পশুর হাট বসবে। কোনভাবেই সড়কের উপর পশু আনা যাবে না। দুই দিনের বাজার কখনো দশ দিন টানা যাবে না। যদিও কেউ করে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রামে কারোনা পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো নয়। নগরের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে। গত কয়েকদিন সংক্রমণের হার ৩৭ শতাংশে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে কিনা তা আসন্ন ঈদুল আজহার ওপর নির্ভর করবে। ঈদের পর সংক্রমণ নিম্নমুখী রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’
যদিও আজ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কোরবানির পশুর হাট বয়কটের পরামর্শ দিয়েছে সরকারের কোভিড বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।