দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কর্মচারী হওয়ার সুবাদে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদীপ বণিক তার কর্মচারী সুদীপ্ত সাহা ওরফে টিংকু (৩৫) কে দিয়ে বসেন চারটি এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড ।দীর্ঘদিন ঠিকমত এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করে বুঝিয়ে দিলেও গতকাল শুক্রবার চারটি বুথ থেকে কার্ড দিয়ে টাকা তুলে নিজেই আত্মসাৎ করে সটকে পড়েন বান্দরবানে। পরে নিজেকে বাঁচাতে সাজালেন অর্থ ডাকাতির নাটক। ডবলমুরিং থানা পুলিশের বিচক্ষণতায় অবশেষে ধরা খেলেন বিশ্বস্ত কর্মচারী।
আজ শনিবার (১০ জুলাই) বেলা ১২টায় ডবলমুরিং থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ কমিশনার মো. আব্দুল ওয়ারীশ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পংকজ দত্ত, সহকারী কমিশনার মো. মাহামুদুল হাসান মামুন, অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন, পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা, উপ-পরিদর্শক নিপু বিশ্বাস, মো. শরীফ উদ্দিন, অর্ণব বড়ুয়া, সহকারী উপ-পরিদর্শক কাজী সাইফুল, সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
গ্রেপ্তার সুদীপ্ত সাহা ওরফে টিংকু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শনির বর ইউনিয়নের মহাজন বাড়ীর অসীম সাহার ছেলে।
শুক্রবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরের ডবলমুরিং থানায় এসে অভিযোগ করেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদীপ।
অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার পংকজ দত্ত, ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন, পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা, উপ-পরিদর্শক নিপু বিশ্বাস, শরীফ উদ্দীন, অর্নব বড়ুয়া এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ও সাদ্দাম হোসেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রদীপ বণিকের খুবই বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিল টিংকু। দোকান মালিকের এটিএম কার্ডের সব পিনই টিংকুর জানা। আগের দিন রাতেই তার ৪টি এটিএম কার্ড টিংকুকে দিয়ে দেন। পরদিন ১২ লাখ টাকা তুলে ১১টায় বাসায় ফেরার কথা তার। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত না আসায় এবং ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার খোঁজ শুরু করেন প্রদীপ।
‘পরে বিকেলে ফোন দিয়ে টিংক তার মালিককে জানায় যে, টাকা তুলে আসার সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস তার সামেন থামে। গাড়িতে থেকে ৪ থেকে ৫ জন লোক ডিবি পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। টিংকু গাড়িতে উঠতেই তার সাথে থাকা ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে মামলা দেয়ার ভয় দেখানো হয়। এক পর্যায়ে গাড়িটি বান্দরবান গিয়ে থামে। সেখানে তার হাত ও চোখ বেঁধে পাহাড়ে ছেড়ে দেয়া হয়।’
পুলিশ আরও জানায়, পরে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মালিক প্রদীপ বণিক থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করলে অভিযানে নামে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বান্দরবানে টিংকুর অবস্থান নিশ্চিত করে। পরে টিংকুকে বান্দরবান থেকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনার বিস্তারিত শুনে কিছু বিষয়ে অসঙ্গতি মনে হয় পুলিশের কাছে। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে রাত ১টায় টিংকু স্বীকার করে টাকা গুলো সে নিজেই আত্মসাৎ করে এবং আইনের চোখ ফাঁকি দিতে সে অর্থ ডাকাতির নাটক সাজায়।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, টিংকু নিজেই ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এবং পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে অর্থ ডাকাতির নাটক সাজায়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিষয়টি স্বীকার করে। টিংকু টাকাগুলো তার বোনের বাসায় রেখেছিল। নগদ অর্থের পাশাপাশি তার কাছ থেকে আমরা ৪টি ব্র্যাক ব্যাংকের ভিসা কার্ড ও একটি কালো ব্যাগ উদ্ধার করি। তার বিরুদ্ধে দি সন্দ্বীপ জুয়েলার্সের মালিক প্রদীপ বণিত বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।