সালিসী বৈঠকে জমা দেয়া টাকা ফেরৎ চাওয়ায় দিন দুপুরে চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে বেদড়ক পিটিয়ে গুলিসহ অস্ত্র দিয়ে নুরুল কাদের নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে থানায় সোর্পদ করেছে বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন। পরে থানা পুলিশের কয়েকদফা তদন্ত ও স্থানীয়দের সাক্ষপ্রমাণে গুলিসহ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আবদুল কাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ২ বছর আগে বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত ছিদ্দিক আহমদের সাথে নুরুজ্জামানের ছেলে আবু সামার ৩২ শতক বসত ভিটা নিয়ে বিরোধের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিনের কাছে বিচার চাইলে তিনি দুই পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেন। ওই প্রেক্ষিতে নুরুল কাদেরও ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসা হয় কিন্তু দুই বছর ধরে নুরুল কাদেরের ৫০ হাজার টাকা ফেরৎ দিচ্ছেন না চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন। ওই টাকা খুঁজতে গেলে চেয়ারম্যান নুরুল কাদেরকে বেধড়ক পিটাতে থাকেন। গত দুই বছরে অন্ততঃ ৩ বার পিটিয়ে নুরুল কাদেরের হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে। নুরুল কাদের চেয়ারম্যানের ভয়ে ৮ মাস ধরে বাড়িতে যেতে পারেননি সে। সর্বশেষে গত জুন মাসে নুরুল কাদের বাড়িতে গেলে চেয়ারম্যান তাকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিলে তিনি চেয়ারম্যানের ভয়ে পৈত্রিক ৩২ শতক বাড়ি-ভিটা ছেড়ে পুঁইছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল নাপোড়া গ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকায় ভাড়াটে একটি ঘরে বসবাস শুরু করেন। চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন হাত ভেংগে দেয়ায় ভাংগা হাত নিয়ে গাড়ি চালাতে পারতেন না। বাঁশখালী প্রধান সড়কের শেখেরখীল বহদ্দারহাট রাস্তার মুখে তার বড় ছেলের ফার্ণিচারের দোকান দেখাশুনা করতেন।
ঘটনার সময় গতকাল বুধবার ঠিক সাড়ে ৩টা । বাঁশখালীর প্রধান সড়কের বহদ্দারহাট রাস্তার মুখে শতাধিক মানুষের সমাগম। ওখানে নুরুল কাদেরের বড় ছেলের ফার্ণিচারের দোকান। ওই ফার্ণিচারের দোকানের পাশে মো. আজমগীরের চায়ের দোকান। ওই দোকানে বসে নুরুল কাদের চা পান করছিলেন। ওই সময় অর্তকিত চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন ৭/৮ জন লোক ও লাঠিসোটা নিয়ে নুরুল কাদেরকে পিটাতে পিটাতে দোকান থেকে বের করে। পরে সিএনজি অটোরিকশা করে ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নাপোড়া- শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ভাড়াটে দোকানে স্থাপিত চেয়ারম্যানের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিয়ে যায়। ওই সময় চেয়ারম্যানের সাথে ছিল ইকবাল, আলী হোসেন, ছগির, রিয়াজউদ্দিন, গাজাটি নুরুল কাদেরসহ আরো কয়েকজন। তারা তাকে বিকাল ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত কয়েক দফা পেটানো হয়। ওখানে হাত-পা তে গুরুতর জখম করে অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে বের করে লোকজন দিয়ে হাতে একটি দেশিয় এলজি ও ৫ রাউন্ড গুলি দিয়ে ছবি তুলে নেন চেয়ারম্যান। পরে এসব ছবি দিয়ে চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে কাছের কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে আগের রেডি করা স্কিপ্ট ও ছবি দিয়ে নিউজ করার জন্য বলে। এসময় চেয়াম্যানের কার্যলয় থেকে থানা পুলিশকে ফোন করে গুলি ও অস্ত্রসহ নুরুল কাদের নামে একজন ডাকাতকে আটকের বিষয়টি জানানো হলে পুলিশ এসে নুরুল কাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে স্থানীয় চায়ের দোকানদার মো. আজমগীর, বহদ্দারহাট জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মো. আব্দুর রহিম, ব্যবসায়ী আব্দুল করিম ও ব্যবসায়ী রিদোয়ান বলেন, আমরা আজমগীরের চায়ের দোকানে ছিলাম।হঠাৎ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিনসহ ৭/৮ জন লোক এসে নুরুল কাদেরকে পিটাতে পিটাতে সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায়। পিটানোর সময় আমরা চেয়ারম্যানকে অনেক অনুরোধ করেছি কিন্তু চেয়ারম্যান শুনেনি।পরে তাকে কার্যালয়ে নিয়ে সেখানেও কয়েক দাফায় পেটায়। পেটানোর পর তার হাতে গুলি ও অস্ত্র তুলে দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
তারা আরও বলেন, চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন ডাকাত ইয়াসিন নামে পরিচিত ছিল। অস্ত্র, হত্যা, ডাকাতিসহ বহু মামলার আসামী। সে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করে নিরহ মানুষকে অস্ত্রগুলি দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এই অস্ত্র কোথায় থেকে এনে চেয়ারম্যান নুরুল কাদেরকে দিয়েছে তা তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাই।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবির বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে ফোন নুরুল কাদের নামে একজন ডাকাতকে গুলি ও অস্ত্রসহ আটক করার খবর দেওয়া হলে আমরা গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি।এসময় একটি দেশিয় এলজি ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে আমরা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ও প্রাথমিক তদন্ত করে চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্যের সত্যতা না পাওয়ায় সোর্পদ করা নুরুল কাদেরকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি। গুলি ও এলজির কে কোথায় থেকে নিয়ে আসছে তা আমরা তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।বিষয়টি উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি জানতে সহকারি পুলিশ সুপার ( আনোয়ারা সার্কেল) হুমায়ন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা নুরুল কাদেরের সম্পৃক্ততা পাইনি তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম রশিদুল হক বলেন, ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করা হবে।