জসীম উদ্দীন, বাঁশখালী প্রতিনিধি:
গত বুধবারের (৩০ জুন) রাতভর টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বাঁশখালীতে ৭টি ছরার (পাহাড়ি ঝর্ণা) অন্ততঃ ৫২ স্পটে ভাঙনে ৩৬ গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, শাক-সবজি ক্ষেত, মৎস্য খামার, পোল্ট্রী ফার্ম পাহাড়ি ঢলে ভেসে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত উক্ত গ্রামগুলোর বাড়ির উঠান, ঘরের বারান্দা হাঁটুর অধিক পানিতে ডুবে থাকায় ৩ শতাধিক পরিবারে চুলায় আগুণ জ্বালাতে পারেনি। গত বুধবার রাতভর ঘুমাতে পারেনি গ্রামবাসী পাহাড়ি ঢলের তান্ডবে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আত্মীয় স্বজনদের দেয়া খাবারে কোন রকম সেরেছে। পোষা অনেক মুরগী, কবুতর পানিতে ভেসে মারা গেছে। দেড় শতাধিক পুকুরের ওপর দিয়ে ৩ ফুট করে পাহাড়ি ঢল প্লাবিত হওয়ায় লাখ লাখ টাকা মাছ ভেসে গেছে। ২ হাজার একর শাক-সবজি ক্ষেত ৫/৬ ফুট করে পাহাড়ি ঢলে ডুবে থাকার পর পাহাড়ি ঢল চলে গেলেও পলি মাটি জমে এবং পানির আঘাতে ক্ষেতের গাছ মরে যেতে শুরু করেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভার বাহার উল্লাহ পাড়া, কেবল কৃষ্ণ মহাজন পাড়া, মহাজন পাড়ায় জলদি ছরার পাড় ভেঙ্গে ৩ শতাধিক ঘর, ৩২টি পুকুর, ১২টি গ্রামীণ রাস্তার ওপর দিয়ে ৪/৫ ফুট করে পাহাড়ি ঢল প্লাবিত হয়েছে। কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৭টি। ওখান কার পরিবারের লোকজন আজ বৃহস্পতিবার বিকালে ও ঘরে ডুকতে পারেনি। পাহাড়ি ঢলে পলি জমে আছে ঘরের ভিতর। উঠানে হাঁটুর অধিক পানি। স্বজনদের বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নিলেও কাঁচা ঘর পাহাড়ি ঢলে চুপষে থাকায় ভেঙ্গে পড়ার আতংকে রয়েছে।
ওখান কার বাসিন্দা বিকাশ দাশ বলেন, জলদী ছরার অধিকাংশ এলাকায় প্রভাবশালী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় ছরা দিয়ে পাহাড়ি ঢল প্লাবিত না হয়ে ছরার পাড় ভেঙ্গে বসতভিটা ও রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে। কোন জনপ্রতিনিধি ছরা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কোনধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয় দুর্ভোগ লেগেই আছে।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নাপোড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলে পুরো গ্রাম জুড়ে ভয়ংকর তান্ডব চালিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে, আস্ত নাপোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কের ৬০ হাত লম্বা একটি অংশ, মীরপাড়া ব্রিজের সম্মুখের বিশাল অংশের মাটি, ব্রাহ্মণপাড়া টেক ব্রিজের বিশাল অংশের মাটি, মীর পাড়ার নুরুল আবছারের বিছবিল্লাহ মৎস্য খামারের ১২ লাখ টাকার মাছ, জসিম উদ্দিন পোল্ট্রি ফার্মের সাড়ে ৩ হাজার মুরগীসহ ফার্ম ডুবে গেছে।
৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শের আলী আলী বলেন, আমার ৫২ বছর বয়স এখন। এই বয়সে আমি কখনও পাহাড়ি ঢলের এরকম তান্ডব দেখিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা গত বছর ৬২ লাখ টাকা দিয়ে নাপোড়া ছরা খননের কাজ করেছে। ওই খনন কাজের কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই। সব ভেসে গেছে।
বিছমিল্লাহ মৎস্য খামারের মালিক নুরুল আবছার বলেন,আল আরাফাহ ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা লোন নিয়ে মৎস্য খামার করেছি। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে সব মাছ ভেসে গেছে। এমনকি মৎস্য খামারের বিশাল অংশ পাহাড়ি ঢলে আসা বালিতে ভরে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে বাঁশখালী পৌরসভা, পুঁইছড়ি, শীলকূপ, চাম্বল, শেখেরখীল, বৈলছড়ি ও কালীপুর ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজি বলেন, ‘ বাঁশখালীর বিভিন্ন গ্রামে পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের লিখিত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিবেদন দেখেই চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হবে।