সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজে যুক্ত হয়েছে একাধিক ছবি কোলাজ করার সুবিধা। এর ফলে ব্যবহারকারীরা এখন থেকে ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজে একাধিক ছবি কোলাজ আকারে পাবলিশ করতে পারবেন। ২০০ কোটির-ও বেশি ইউজারবেজ-সমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্মটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিচার হচ্ছে স্টোরিজ। তাই স্বাভাবিকভাবেই স্টোরিজ ফিচারটিতে নিত্যনতুন সব অপশন যুক্ত করতে ইন্সটাগ্রাম সদা সচেষ্ট।
সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের অনেকেই ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজে একাধিক ছবি কোলাজ করার প্রম্পট বা অপশন দেখতে পেয়েছেন। অপশনটিতে ট্যাপ করে ডিভাইসের গ্যালারি বা ক্যামেরা রোল থেকে একাধিক ছবি সিলেক্ট করে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ছবির কোলাজ।
সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যাট নাভারা সম্প্রতি ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজের নতুন এই ফিচারটির কথা নিজের থ্রেড অ্যাকাউন্টে ছবিসহ শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি প্রম্পট থেকে একাধিক ছবির কোলাজ কীভাবে তৈরি করতে হয় সেটা ছবির মাধ্যমে দেখিয়েছেন।
অবশ্য একাধিক ছবির কোলাজ দিয়ে স্টোরিজ তৈরির সুযোগ এবারই প্রথম নিয়ে আসেনি ইন্সটাগ্রাম। লেআউট অপশন-এর মাধ্যমে বেশ অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন প্রকারের কোলাজ দিয়ে স্টোরিজ করার সুবিধা রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটিতে। তবে সেক্ষেত্রে একটা সীমাবদ্ধতা ছিল এই যে, ছবির কোলাজটি কোন লেআউটে হবে সেটা ব্যবহারকারীকে আগে থেকেই সিলেক্ট করে দিতে হতো। ফলে নির্দিষ্ট লেআউটের বাইরে কোলাজের ফরম্যাট পরিবর্তনের সুযোগ ছিল না।
তবে এবারের আপডেটেড কোলাজ ফিচারে সে সুযোগ রয়েছে। অন্তত ডিজাইনের দিক থেকে এটি আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্মুক্ত। ফলে নতুন কোলাজ অপশনে ইচ্ছেমতো নতুন নতুন সব ভিজ্যুয়াল ডিজাইনে ছবি কোলাজ করতে পারবেন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীরা।
উল্লেখ্য, ইন্সটাগ্রাম বেশ অনেক দিন ধরেই ছবি কোলাজ করার ফিচারটি নিয়ে বিভিন্ন রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করে আসছে। এমনকি পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে বাদ যায়নি তাঁদের গ্রুপ চ্যাট-ও। কোলাজ অপশনটি গ্রুপ চ্যাটেও ফিচার হিসেবে এসেছে ইন্সটাগ্রাম, যেটা দেখতে স্টোরিজের কোলাজ অপশনের মতো হলেই কিছুটা ভিন্ন।
ইন্সটাগ্রাম তাঁদের কোলাজ ফিচারটি নিয়ে কাজ করতে শুরু করে খুব সম্ভবত ২০২২ সালের শেষ দিকে, ঠিক যখন পিন্টারেস্ট-এর ‘শাফলস’ অ্যাপটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে তখন থে। ‘শাফলস’ অ্যাপটি ব্যবহার করে পিন্টারেস্টে আপলোড করা ছবির চমৎকার সব কোলাজ তৈরি করা যেত। ফলে এই অ্যাপটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠে ব্যবহারকারীদের মাঝে।
এরপর মেটা’র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো সচরাচর যা করে থাকে ইন্সটাগ্রামও ঠিক তাই করল। শাফলস-এর অনুকরণে তাঁরা নিয়ে এল কোলাজ ফিচার। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, মেটার এই কৌশল কিন্তু বেশ সফল হয়েছে। স্টোরিজ ফিচারটিও মেটা নিয়ে এসেছে স্ন্যাপচ্যাট-কে অনুকরণ করে। এছাড়া স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক-এর দেখাদেখি তাঁরা রিলস চালু করেছে ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুকে।
মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তি হচ্ছে তারা পরিবর্তন-বিমুখ। তাই নতুন কোনো প্ল্যাটফর্মে তারা সহজেই যেতে চায় না। কেননা নতুন প্ল্যাটফর্ম মানেই নতুন পরিবেশ; সেখানে গিয়ে প্রথমেই তার ব্যবহার শিখে নিতে হয়। এখানে মেটার কৌশল হচ্ছে প্রতিযোগী প্ল্যাটফর্মগুলোতে জনপ্রিয় যে সকল ফিচার রয়েছে সেগুলোর অনুকরণে একই ধরণের ফিচার নিজেদের প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। এতে করে ব্যবহারকারীদের বড় অংশকেই ধরে রাখতে সমর্থ হয় মেটার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো।
কোলাজ এখনও পর্যন্ত খুব বড় কোনো ফিচার হয়ে উঠেনি। তবে পিন্টারেস্ট ইতোমধ্যেই কোলাজ ফিচারটিকে একটি ই-কমার্স টুল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে কোলাজ অপশনে পিন্টারেস্ট ব্যবহারকারীরা এখন বিক্রয়যোগ্য প্রোডাক্ট পিন করতে পারে।
কোলাজ নিয়ে ইন্সটাগ্রামের উদ্দেশ্য-ও কি এমন কিছু, সেটা অবশ্য সময়ের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।