নগরীর হাজারি গলি এখানকার এমন শত শত অলি গলিতে লুকিয়ে আছে এই শহরের হাজারো ঐতিহ্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানেই নিপুন দক্ষতায় স্বর্ণালংকার গড়ে তুলছেন শত শত কারিগর।
নির্মল ধরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে সালফিউরিক অ্যাসিডে ধুয়ে সোনার বালা উজ্জ্বল করলেন। এরপর বালায় সোহাগা লাগাতে শুরু করলেন। বাঁকা নলে ফুঁ দিয়ে মোমের আগুন লাগাচ্ছেন বালায়। আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বালা।
গবেষকেরা বলছেন, নির্মল ধরের মতো সোনার অলংকার তৈরি করা মানুষ (স্বর্ণকার) তুলনামূলক কম দিন বাঁচেন। দেশের সাধারণ মানুষের চেয়ে স্বর্ণকারদের গড় আয়ু ১২ দশমিক ৩ বছর কম।
নির্মল ধরের বয়স ৫০ বছর পেরিয়েছে। নগরীর হাজারি গলির রোডে তাঁর দোকান। ছোট একটি ঘর, তিন থেকে চারজন কোনোরকমে বসে কাজ করতে পারেন। মোমের আগুন নিভে যাবে, তাই বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও চালানো হয় না। ভ্যাপসা গরমের মধ্যেই কাজ করছিলেন এই স্বর্ণকার।
নগরীর হাজারি গলিতে প্রায় দুই থেকে তিনহাজার স্বর্ণকারের দোকান রয়েছে। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গিয়েছে প্রায় সব দোকানেই বয়স্ক লোকের চেয়ে কম বয়সী কারিগরদেরই দেখা গিয়েছে। কারিগর সঞ্জিত ধরের সাথে কথা বলে জানা যায়।
গবেষকেরা বলছেন, সারা দেশে দুই থেকে তিন লাখ স্বর্ণকার আছেন। বড় শহর, ছোট শহর, উপজেলা সদর বা পুরোনো বড় বড় বাজারে স্বর্ণকারদের দেখা যায়। অলংকার তৈরি করার সময় স্বর্ণকারেরা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসেন। এর মধ্যে আছে সায়ানাইড, সিসা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সিলিকা। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন এসব রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাঁরা বিষক্রিয়ার শিকার হন। নানা ধরনের রোগে ভোগেন।
২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। অন্যদিকে গবেষণা অনুযায়ী, স্বর্ণকারদের গড় আয়ু ৬০ বছর; অর্থাৎ স্বর্ণকারেরা সাধারণ মানুষের চেয়ে গড়ে ১২ দশমিক ৩ বছর কম বাঁচেন।