ঘড়ির কাঁটায় সময় বেলা ১১টা ৪০ মিনিট। রেল ক্রসিংয়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায় বোরকা পরিহিত একজন নারী গেটম্যানকে। মুখে থাকা বাঁশি বাজিয়ে থামানোর চেষ্টা করছিলেন রেল ক্রসিং দিয়ে পারাপার হওয়া গাড়ি; সরিয়ে দিচ্ছিলেন পথচারীদের। বলছিলাম শিল্পী বেগমের কথা। তার বয়স ৩৬ ছুঁইছুঁই। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। থাকেন নগরীর আমবাগান এলাকায়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে নারী গেটম্যান হিসাবে যোগ দেন তিনি। ৬ বছর ধরে গেটম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন ২ নং গেটের এই ক্রসিংয়ে।
হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে নামিয়ে দিচ্ছেন সড়কের দুই প্রান্তের ব্যারিকেড। রেললাইনের দিকে বার বার উঁকি মেরে দেখছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পর্যটন এক্সপ্রেস যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। এরই মধ্যে বেজে ওঠে হাতে থাকা টেলিফোনটি। ওইদিক থেকে ট্রেন আসার সতর্কবার্তা শুনে মুখে বাঁশি আর লাল ও সবুজ রঙের পতাকা হাতে নিয়ে দ্রুত দাঁড়িয়ে যান রেল ক্রসিংয়ে দ্বারে। হাতে থাকা সবুজ পতাকাটি নেড়ে লাইন পরিষ্কারের বার্তা দিচ্ছিলেন ছুটে আসা ট্রেনটিকে। ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে গেট দিয়ে নিরাপদে ছুটে যায় ট্রেনটি। পুনরায় হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ব্যারিকেড উঠিয়ে স্বাভাবিক করে দেন যান চলাচল। এই তার নিত্যদিনের কাজ।
গেটম্যান শিল্পী বেগমের স্বামী নেই। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সংসার। গেটম্যানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালন করে যাচ্ছেন তিনি। নারী হয়েও দীর্ঘদিন ধরে সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে পুরুষ গেটম্যানের মতো দায়িত্ব পালন যাচ্ছেন তিনি। দিন–রাত পালাবদলে কাজ করেন। ডিউটি চলাকালে এদিক–ওদিক যাওয়ার সুযোগ নেই তার।
শিল্পী বেগম বলেন কাজের মধ্যে নারী–পুরুষ পার্থক্য নেই। মনোবলই বড়। এই কাজ তার জন্য কঠিন কিছু নয়। তিনি মনে করেন সহজ কাজই তিনি করছেন। গেটম্যানের চাকরি দায়িত্বশীল কাজ। দায়িত্বরত অবস্থায় খুবই সতর্ক থাকতে হয় তাদের। বিগত ৬ বছর যাবৎ দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পী বেগম।
প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হয় তাকে। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২ নং গেট রেল ক্রসিংটি দিয়ে বেশ কয়েকবার ট্রেন আসা–যাওয়া করে। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম রেল গেট এটি। এই রেল ক্রসিং দক্ষতার সাথে সামাল দিতে হয় তাকে। নারী দৃষ্টান্তের এক অনন্য প্রতীক শিল্পী বেগম।