বহু আগে থেকেই কামাররা শক্ত হাতের কারুকাজের মাধ্যমে লোহা দিয়ে দা, বঁটি, কাস্তে, খুন্তি, চাকুসহ নানা গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভালোবাসার এই জীবীকা ফিকে হতে চলেছে। দিনরাত লোহা পুড়িয়ে লাল করে পিটিয়ে ধারালো দা, বটি, ছুরি, চাপাতি তৈরির ব্যাস্ততা আগের মতো চোখে পরে না।অলস সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে কারিগরদের।
আগ্রাবাদ এলাকার কামারপট্টিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মকার ও তাদের কারিগর লোহা পিটানো, গলানো, ধারালো করা, আল কাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করছেন। বংশ পরম্পরায় চলে আসা এক সময়ের ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে তারাও তাদের সন্তানকে এ পেশায় আনতে নারাজ। কামারপাড়ার সুশীল কর্মকার জানান, এখন অনেক খারাপ সময় যাচ্ছে। বছরের বেশিরভাগ সময় বসেই থাকতে হয়।
যুগের পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় একটু একটু করে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে হাতে তৈরি লোহার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। নতুন করে স্থান করে নিচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের যন্ত্রপাতি। দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়াতে ক্রেতারা ক্রয় করছেন স্টিলের চাকু, খুন্তি, কাস্তেসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ফলে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের যন্ত্রপাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখন এই পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন।
এসব দোকানে অতীতে কামারদের কাজ কর্মের প্রচুর গতিশীলতা থাকলেও এখন বাজারে মেশিনে তৈরি স্টিলের যন্ত্রপাতির উপস্থিতিতে হাতে তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির অর্ডার কমে যাচ্ছে, এক প্রকার নিশ্চল হয়ে যাচ্ছে সেই কাজের গতি। এছাড়া কয়লা ও লোহার মূল্য বৃদ্ধির মতো বেশ কয়েকটি জটিলতার কারণে সবদিক থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত থেকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই এখন বড় কষ্টকর বলে জানিয়েছেন কামার শিল্পীরা ।