এয়ারলাইন্স কোম্পানির দুই লাখ টাকা বেতনের চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরি হারানো মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি যোগ দিচ্ছেন একটি বেসরকারি ভেটেরিনারি মেডিসিন ফার্মে। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ পেয়েছেন। বেতন মাসে ৮০ হাজার টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে শরীফ আগামী সপ্তাহে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।
শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভেটেরিনারি চিকিৎসক। পড়েছিও পশুস্বাস্থ্য নিয়ে। গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ার পর দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান আমাকে চাকরির অফার দেয়। অনেকে চাকরির অ্যাপয়েনমেন্ট লেটারও পাঠিয়ে দেন। এখানে দুটি এয়ার লাইন্স কোম্পানির অফারও ছিল। এয়ার লাইন্স কোম্পানির অফারে মাসে বেতন ছিল দুই লাখ টাকা। আমি ওই চাকরিতে জয়েন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চিটাগং লাইভ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাকরি জীবনের শুরু থেকে গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়েছি। এখনো গণমাধ্যম আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’
চাকরি হারানোর পর আর্থিক অনটনে পড়েন শরীফ উদ্দিন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে তিনি ভাইয়ের কনফেকশনারিতে কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে গত ৬ নভেম্বর জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর শরীফের কাছে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব আসে। চিটাগং লাইভের ভিডিও দেখেছেন ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। চিটাগং লাইভের সাথে যোগাযোগ করেও বহু প্রতিষ্ঠান শরীফকে চাকরি দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, দুদকের বড় বড় অভিযোগের ফাইল অনুসন্ধানে নিয়োজিত ছিলেন সংস্থার উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। এরমধ্যে অন্যতম কক্সবাজারে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণ কাজে দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পখ্যাত কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্পে অনিয়ম উদঘাটন, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির উৎস অনুসন্ধান, কর্ণফুলী গ্যাসের বড় বড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মামলার সুপারিশ করেছিলেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দিয়েছিলেন শরীফ।
কক্সবাজারের জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ২২ জন আমলা, তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি কাল হয়ে দাঁড়ায় শরীফ উদ্দিনের।
২০২১ সালের ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। পরবর্তীসময়ে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪-এর ২ ধারায় কমিশনের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪(২) ধারায় বলা আছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে ৯০ দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’