বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি খ্যাত চট্টগ্রামে আগমন করা প্রথম সুফি সাধক হিসাবে পরিচিত হযরত শাহ বদর (রহ.)। তাঁর প্রকৃত নাম মখদুম শাহ বদরউদ্দীন বদরে আলম জাহেদী। অনেকেই তাঁকে বদর আলম, বদর আউলিয়া, বদর পীর বা পীর বদর ও বদর শাহ নামে ডাকে। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে তাঁর নাম ‘শাহ বদর আলম’ হিসেবে পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামে তাঁর আগমনকাল সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয়; ১৩৩৮ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহের বাংলা বিজয়ের পর অনেক সুফি সাধক এখানে এসেছিলেন। বদর আউলিয়ার আগমনও এ সময়ে ঘটেছে।
চট্টগ্রামের ১২ আউলিয়ার মধ্যে বদর আউলিয়াকেই প্রধান হিসেবে সম্মান দেখানো হয়। চট্টগ্রাম নগরীর বকশিরহাটের কাছে বদরপট্টি গলিতে বদর শাহ (র) এর মাজার অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম বদর শাহ মাজার। অনুপম স্থাপত্যে গড়া এই মাজার চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন ইমারত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঐতিহাসিকদের কাছে।
আরও পড়ুন: বায়েজিদ বোস্তামি দরগাহ’র বোস্তামি কাছিম
৬০০ থেকে ৭০০ বছর আগে বদর আউলিয়ার মাজারটি ছিল কর্ণফুলী নদীর একেবারে তীর ঘেঁষে। নদীর মুখোমুখি ও তার বিপরীত দিকে দুটো গেট ছিল একসময়। রাস্তার মুখোমুখি গেটটি না থাকলেও পেছনেরটির ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়ে গেছে।
পারস্যের প্রাক-মুসলিম সভ্যতার স্থাপত্যরীতি অনুসরণে নির্মিত এই মাজারের ভেতরে পাওয়া গেছে নসক শৈলীতে লেখা প্রাচীন আরবি শিলালিপি। দুষ্পাঠ্য এই শিলালিপি বদর পীরের সমাধিফলক বলে মনে করেন ইতিহাসবিদেরা। প্রায় সাতশো বছরের স্মৃতি বহন করা বদর আউলিয়া মাজারের স্থাপত্যশৈলী দেখে বোঝা যায় এটি পুরোপুরি সুলতানি আমলের।
সুদৃশ্য গিলাফে ঢাকা বদর আউলিয়ার মূল সমাধি ঘরটি বদর আউলিয়ার সময়কালে নির্মিত হয়েছে।বদর পীরের চাটির কথা এখনও সকলে ভক্তি ভরে স্মরন করে থাকে।এই চাটি এখনো মাজার প্রাঙ্গণে রয়েছে। আর আছে সে সময়কার পানির কুপ।
চট্টগ্রামে আউলিয়াদের স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখতে।সরকারীভাবে হযরত বদর আউলিয়ার মাজার, স্মৃতির চিহ্ন বদর মোকাম, বদর আউলিয়ার ব্যবহারিত প্রাচীন কিস্তি, পাথর, চেরাগ ও অন্যান্য সমগ্রী স্থায়ী রূপে সংরক্ষণ করার দাবি স্থানীয়দের।