রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যজুড়ে বইছে শোকের বন্যা। রানির মৃত্যুতে গতকাল শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া শোক আগামী ১০ দিন ধরে চলবে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, রানির শেষকৃত্য হতে পারে ১৯ সেপ্টেম্বর। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন হতে পারে।
সাত দশকেরও বেশি সময় ব্রিটিশ সিংহাসনে আসীন থাকার পর বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আসীন ও বিশ্বের প্রবীণতম রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অপারেশন ইউনিকর্ন
রানীর মৃত্যুতে ১০ দিনের যে কর্মপ্রক্রিয়া মেনে চলা হবে তার নাম ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’। ’৬০-এর দশকে এই পরিকল্পনা হয়, যেটি ২০১৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায়। পরে গত বছর সংবাদমাধ্যম পলিটিকো এটি প্রকাশ করে। যদিও তাতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এই কর্মপ্রক্রিয়া শেষে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে রানির। এরপর তাকে সমাহিত করা হবে উইন্ডসর প্রসাদের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে স্বামী প্রিন্স ফিলিপের পাশে।
স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসলে রানির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন লন্ডন ব্রিজ’ শুরু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট শোক বার্তা প্রচার করবে। পার্লামেন্টের স্বাভাবিক কাজকর্ম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। স্কটল্যান্ডে রানির প্রিয় প্রাসাদে মৃত্যুর ঘটনাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ইউনিকর্ন’।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মৃত্যুর পরদিন গতকাল রানির কফিনটি এডিনবার্গের হলিরুড প্রাসাদে নিয়ে যাওয়ার কথা। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, এর পরদিন সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রায় রানির কফিন নেওয়া হবে এডিনবার্গের রয়েল মাইলের সেন্ট জাইলস ক্যাথিড্রালে। ২৪ ঘণ্টা সেখানে থাকবে রানির মরদেহ। পরদিন সেন্ট জাইলস ক্যাথিড্রাল থেকে রানির মরদেহ ট্রেনে ওঠানো হবে। রানির মৃত্যুর পঞ্চম দিনে মরদেহ লন্ডনে এসে পৌঁছাবে। সেখান থেকে গাড়িতে করে রানির কফিন নেওয়া হবে বাকিংহাম প্যালেসে।
পরদিন লন্ডনে আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রার মাধ্যমে কফিনটিকে বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টারের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হবে। সেদিন থেকে পাঁচ দিন রানির মরদেহ ওয়েস্টমিনস্টার হলে রাখা হবে। সেখানে জনসাধারণ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে। প্রতিদিন ২৩ ঘণ্টা জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ থাকবে। সেখানে রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাজপরিবারের সদস্য, যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও। এরপর রানির কফিনটি ১১ শতকে মধ্যযুগীয় আদলে গড়া কাঠের ছাদের নিচে একটি উঁচু প্ল্যাটফরমে রাখা হবে। এর মধ্য দিয়ে ১০ দিনের কর্মপ্রক্রিয়া শেষ হবে।
রাজপরিবারের নির্ধারিত দিনে ঐতিহাসিক গির্জা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। এই গির্জায় ব্রিটেনের রাজা এবং রানিদের অভিষেক মুকুট পরানো হয়। এখানেই ১৯৫৩ সালে রানি হিসেবে এলিজাবেথের অভিষেক হয়েছিল। এখানেই ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ১৮ শতক থেকে অ্যাবেতে কোনো রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান হয়নি। তবে ২০০২ সালে সেখানে রানির মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছিল। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন ২ লাখের বেশি মানুষ।
ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবির সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন ডেভিড হোয়েল রানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও সেখানে ধর্মীয় উপদেশ (সারমন) পড়ে শোনাবেন। সে সময় ব্রিটেন জুড়ে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে।
স্বামী ফিলিপের পাশেই সমাহিত হবেন রানি
এরপর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে রানির কফিন নিয়ে যাওয়া হবে হাইড পার্ক কর্নারের ওয়েলিংটন আর্কে। সেখান থেকে কফিনবাহী বহর উইন্ডসরের পথে যাত্রা করবে। উইন্ডসরের ক্যাসলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে রাখা কফিনে আবারও শ্রদ্ধা জানাবেন রাজপরিবারের সদস্যরা। এরপর সেন্ট জর্জ চ্যাপেল গির্জার ভেতর রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন রানি। যেখানে শায়িত আছেন রানির স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ছাড়াও বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ, বোন প্রিন্সেস মার্গারেট। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর আরো সাত দিন রাজকীয় শোক অব্যাহত থাকবে।
উপস্থিত থাকবেন বিশ্ব নেতারা
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রানির শেষকৃত্যে বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন।
জো বাইডেন বলেছেন, ‘রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে আমি যাচ্ছি।’