চট্টগ্রামের জামালখান যেন মনের জানালা খুলে সবার ওপর টেক্কা দিয়ে বসে আছে। এই ওয়ার্ডের প্রতিটি ইটপাথরের গাঁথুনি, অলি-গলি, রাজপথ, ঘরবাড়ি, দালানকোঠার পরতে পরতে ইতিহাসের পরম্পরা; ঐতিহাসিক ঘটনার ঘনঘটা। কান পাতলে শোনা যায় কালে কালে নানা ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের পদচারণ। তবে শুধু ইতিহাস নয়, সৌন্দর্যের দিক দিয়েও জামালখান এখন চট্টগ্রামের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় ওয়ার্ড।
আধুনিক প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্নতা, ঐতিহ্য–সংস্কৃতির আধার হয়ে উঠেছে এক বর্গকিলোমিটারের এই ওয়ার্ড। অতীতের হেলদি ওয়ার্ড খ্যাত এটি এখন সৌন্দর্যের প্রতিভূ হয়ে উঠেছে। হয়েছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সন্ধ্যার পর ভিড় জমে জামালখান ডা. আবুল হাসেম চত্বরের নবনির্মিত ঝরণা দেখতে।
জামালখানের এজি চার্জ স্কুল থেকে পিডিবি পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ফুট ফুটপাতজুড়ে রয়েছে বাগান ও বসার জায়গা। ফুটপাতে বসানো হয়েছে টাইলস। পরিত্যক্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোয় হয়েছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এছাড়া এখানে অন্যতম আকর্ষণ পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা।
আরও পড়ুন: জাপানে অপরাধের হার শতকরায় শূন্য কেন?
জামালখানের সড়ক ধরে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে একবার হেঁটে গেলে হবে। চোখের প্রশান্তি জুড়াবে এমন অনেক কিছুই ধরা পড়বে। ভেতর থেকে অজান্তেই বেরুবে কয়েকটি শব্দ-সবুজ, পরিপাটি, গোঁছানো।
দেয়ালে দেয়ালে দেশবরেণ্য মনিষিদের ম্যুরাল। চারপাশে সবুজ আর রঙ বেরঙের আলোর ঝলকানি। সন্ধ্যা নামলে আকাশ থেকে নামে নীল পানির ফোয়ারা। এ যেন সত্যি এক স্বপ্নের রাজ্য। জামালখানের নান্দনিক সৌন্দর্য চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে দেশজুড়ে তুলে ধরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
এখানে সড়কের পাশেই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম এক্যুরিয়াম পার্ক। মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকার একটি টোকেন ফি দিয়ে থ্রিডি ছবির মাধ্যমে ছোট বাচ্চারা সাগর তলদেশের নানা বৈচিত্র দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।
আরও পড়ুন: বৃটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে যে মসজিদের তথ্য
জামালখানে সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই এখন চোখে পড়বে নানা রঙের দেয়াল গ্রাফিতি। চাঁদের বুড়ি, গোপালভাঁড়, ঠাকুরমার ঝুলি, আলাদিন থেকে শুরু করে দেশি–বিদেশি নানা কার্টুনের চিত্রকর্ম ফুটে উঠেছে জামালখানে। অ্যাকুরিয়াম পার্কের পাশে সড়কের দেয়াল ঘিরে এসব গ্রাফিতি যেন আরো নান্দনিক করে তুলেছে জামালখানকে।
জামালখানের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য মন কেড়েছে সবার। এখানে আসলেই অনাবিল প্রশান্তি মেলে।তাই তো নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রশান্তির খোজে মানুষ ছুটে আসে এই জায়গায়। নগরীর সব ওয়ার্ড এমন অবয়বে গড়ে উঠুক এই প্রত্যাশা নগরবাসীর।