যে মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে লালন করে জন্ম দিয়েছেন নাড়ি ছেঁড়া সন্তান, খেয়ে না খেয়ে খাইয়েছেন আদরের সন্তানকে, আদরে-সোহাগে ‘বড়ো’ করেছেন, মায়ের বৃদ্ধ বয়সে সে সন্তানই মাকে জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে গেছেন। এমন নির্মমতা এখনও আমাদের সমাজে বিদ্যমান। হৃদয় বিদারক, নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিগ্রামে।
পারিবারিক কলহের জেরে মর্জিনা বেওয়া (৮২) নামে ওই মাকে জঙ্গলে ফেলে চলে যান তাঁরই ছোট সন্তান মনিরুল ইসলাম। মর্জিনা বেওয়ার ৫ সন্তান। তিন মেয়ে, দুই ছেলে। মৃত্যুর আগে স্বামী রেখে যান ৪ কাঠা সম্পত্তি। তা থেকে তিন মেয়ের বিয়েতে বিক্রি করে দিতে হয় ২ কাঠা। বাকি ২ কাঠা ভাগ করে দেন ২ ছেলেকে। তবুও যেন, মন ভরেনি সন্তানদের, তাদের স্ত্রীদের। তাই একমাস পালা করে দুই ভাই মাকে রাখলেও সেখানে ছিল না কোনো শান্তি, বৃদ্ধ, অসুস্থ মায়ের যত্ন-আত্মি।
শাশুড়ির ‘সেবা’ করতে করতে বিরক্ত মনিরুলের স্ত্রী তাই স্বামীকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন মাকে ‘বিদায়’ করার। এ নিয়ে নিত্য কলহ লেগে থাকত মনিরুলের পরিবারে। সে চাপ আর সইতে না পেরে অবশেষে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) অসুস্থ, বৃদ্ধা মাকে একা জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায় মনিরুল। খবর পেয়ে স্থানীয়রা মর্জিনা বেওয়াকে উদ্ধার করে তাঁর ছোট মেয়ের বাড়িতে রেখে এসেছেন।
আরও পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন চবি শিক্ষক
মর্জিনা বেওয়া শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতন্যপুর নাককাটিতলা গ্রামের মৃত সইবুর রহমানের স্ত্রী।স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে পৌরসভা এলাকার বালিগ্রামে কে বা কারা বৃদ্ধাকে জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ও জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিম ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নেন। ছেলে কীভাবে জঙ্গলে ফেলে গেছে তা বৃদ্ধার কাছে শোনেন। পরে তাকে উদ্ধার করে তার ছোট মেয়ের বাড়িতে রেখে আসেন।
স্বজনরা জানান, মর্জিনা বেওয়ার চার কাঠা জমি ছিল। তার মধ্যে দুই কাঠা জিমি বিক্রি করে তিন মেয়ের পেছনে ব্যয় করেছেন। আর দুই ছেলেকে এক কাঠা করে জমি দিয়েছেন। এ কারণে ছেলে ও পুত্রবধূরা তার দেখভাল করতেন না। এক মাস বড় ছেলের কাছে আরেক ছোট ছেলের কাছে থাকতেন।
রাস্তায় ফেলে যাওয়ার ঘটনার আগ পর্যন্ত ছোট ছেলে মনিরুল ইসলামের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গায় থাকতেন মর্জিনা বেওয়া। শুক্রবার সকালে পৌর এলাকার বালিগ্রামে ছোট বোনের বাড়ির পাশের জঙ্গলে মাকে ফেলে পালিয়ে যান তিনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় কৃষক লীগ নেতা আব্দুল হাকিমের হস্তক্ষেপে একই মহল্লায় বসবাসরত ছোট মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় হয় বৃদ্ধার।
আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়ার চিকিৎসা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছি। মায়ের সঙ্গে যারা অমানবিক আচরণ করেছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস ক্লাস, মাউশি’র নতুন সময়সূচি
মর্জিনা বেওয়ার ছোট মেয়ে নাসিমা বেগম বলেন, ‘জমি নিয়ে আমার ভাই মনিরুলের স্ত্রী অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের সেবা-যত্ন না করতে চায় না। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া ও অশান্তি হতো পরিবারে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর যন্ত্রণা সইতে না পেরে আমার ভাই মাকে জঙ্গলে ফেলে যায়।’
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাটি আজকেই জানলাম। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সমাজে এমনটা হওয়া ঠিক না। আমি খোঁজ নিয়ে যতটুকু সাহায্য করার করবো।’
শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’