হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ), ১২০০ বছর ধরে টিকে আছে মাতৃভক্তির যে ইতিহাস

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বায়েজিদ বোস্তামি (রহ), এক রাতে তার ধার্মিক মা ঘুম ভেঙে গেলে পানি পান করতে চাইলেন। কিন্তু ঘরে পানি ছিল না। তখন বালক বায়েজিদ পানি আনতে বেরোলেন বাইরে। দূরের এক ঝরণা থেকে পানি নিয়ে তিনি যখন ঘরে ফিরলেন তখন তার মা আর জেগে নেই। আবারও ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু বায়েজিদ মায়ের ঘুম না ভাঙিয়ে শিয়রের কাছে সারা রাত দাঁড়িয়ে রইলেন পানির গ্লাস হাতে করে এই ভেবে যে, যদি মা আবার উঠে পানি পান করতে চান।

রাত পেরিয়ে সকাল হলে মায়ের ঘুম ভাঙল। তিনি দেখলেন বায়েজিদ দাঁড়িয়ে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে। মায়ের প্রতি এই আবেগ দেখে মা উদ্বেলিত হয়ে পড়লেন। জানা যায়, তিনি বলেছিলেন, বায়েজিদ একদিন অনেক বড় হবে।

বায়েজিদ বোস্তামি (রহ) একজন বিখ্যাত ইরানী সূফী সাধক। সুলতান-উল-আরেফিন নামেও পরিচিত। তার জন্ম ইরানের বোস্তাম শহরে। মায়ের দোয়ার বরকতে তিনি বিশ্ববিখ্যাত আউলিয়ায় পরিণত হন।

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সেনানিবাসের নিকটবর্তী এলাকায় বায়েজিদ বোস্তামির দরগাহ অবস্থিত। এ দরগাহের কারণে পুরো এলাকার নামই হয়ে যায় বায়েজিদ বোস্তামি। যদিও হযরত বায়েজিদ বোস্তামির মাজার ইরানের বোস্তাম নগরীতে।

ধারণা করা হয়, সুফি সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড়ের উপরে কিংবা জঙ্গলঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গায় মাজার কিংবা এ ধরনের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামির মাজারটাও মূলত তাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।

জনশ্রুতি আছে, বায়েজিদ বোস্তামি চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন। চট্টগ্রামে অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন। পরবর্তীতে ওই রক্ত ফোঁটা পড়ার জায়গায় বায়েজিদ বোস্তামির নামে মাজার গড়ে ওঠে।

অনেকে বলেন, বায়েজিদ বোস্তামি নিজেই মাজার গড়ে তোলার কথা বলে গিয়েছিলেন। এই জনশ্রুতির পক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষীর নাম বর্ণিত আছে। বায়েজিদ বোস্তামিকে যেহেতু সুলতান- উল আরেফিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যে সূত্রে তা হলো এই শাহ সুলতান আর সুলতান-উল আরেফিনকে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

বায়েজিদ বোস্তামির সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙিনার মাঝে আবিষ্কার করা হয়। এখানে প্রতিদিনই থাকে মানুষের ভিড়। মাজারটির পাদদেশে রয়েছে একটি বিশালাকার পুকুর। আর ওই পুকুরের মূল আকর্ষণ বিস্ময়কর কচ্ছপ বা কাছিম। স্থানীয়রা তাদের মাজারি ও গজারি বলেই আখ্যায়িত করেন। এ কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অত্যন্ত বিরল এবং বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামির মাজার ছাড়া তাদের বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। তাই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য খুব আকর্ষণীয় এ কচ্ছপ। বিশালাকার কচ্ছপগুলো দেখলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এই কচ্ছপগুলোর অনেকেই বয়স প্রায় ২০০-২৫০ বছর। মাজারের বড় বড় এ কচ্ছপগুলোকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা খাবার দেন।

বিখ্যাত এই সুফি কঠোর তপস্যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভের আশায় দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন। সুফিবাদের মতে, এমন কঠোর সাধনাই পারে কোনো মানুষকে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্যলাভের কাছাকাছি পর্যায়ে নিয়ে যেতে। প্রখ্যাত এই আউলিয়া ৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ১৩১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। পরে তাকে ইরানের বোস্তাম শহরে সমাহিত করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.