এক পায়ে লাফিয়ে ২ কিমি দূরের স্কুলে যায় সুমাইয়া

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মাত্র দুই বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় সুমাইয়ার বাম পা বেঁকে যায়। এরপর বহু চিকিৎসা করেও ওই পা ঠিক করা যায়নি। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে রিকশাচালক বাবাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখন সুমাইয়ার বয়স ১০ বছর। ছোট্ট সুমাইয়া বড় হয়েছে, বড় হয়েছে তার ডান পা-টিও। কিন্তু বেঁকে যাওয়া ওই বাম পা ছোটই থেকে গেছে। কিন্তু তাতে দমে যায়নি সুমাইয়া। এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে দুই কিলোমিটার দূরের স্কুলে যাচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পার করে এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে সে।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়া গ্রামের রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া। উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। বড় হয়ে সে চিকিৎসক হতে চায়। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখে খুশি এলাকাবাসী, সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা জানায়, সুমাইয়া রোজ দুই কিলোমিটার রাস্তা পিঠে ব্যাগ আর হাতে বই নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয়। ছোট্ট মেয়েটির বই ভর্তি ভারী ব্যাগ নিয়ে এভাবে রোজ লাফিয়ে স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য স্থানীয়দের অন্তরে নাড়া দেয়। পাশাপাশি ছোট্ট সুমাইয়া তাদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা।

সুমাইয়ার পরিবার জানায়, ডান পায়ের থেকে ছোট হওয়ায় বাম পা কোনোভাবেই আর মাটিতে পড়ে না। তাই লাফিয়ে লাফিয়ে সুমাইয়াকে সব কাজ করতে হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৩ লাখ টাকা হলে তাকে ভালো করা সম্ভব। কিন্তু রিকশাচালক পরিবারের পক্ষে এ টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। তাই সমাজের বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করেন সুমাইয়ার মা-বাবা।

সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, ‘মেয়ে যখন স্কুলে যায় তখন তার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাওয়ার এই দৃশ্য দেখে আমি মা হয়ে আর সহ্য করতে পারি না। দু-চোখে শুধু পানি চলে আসে। শুধু প্রার্থনা আল্লাহর কাছে আমার মেয়ে সুমাইয়া যেন সুস্থ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সবার মতো দুই পা দিয়ে হেঁটে চলতে পারে।’

সুমাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই আট বছরে অনেক চিকিৎসা করেছি কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অর্থোপেডিক চিকিৎসকরা বলেছেন, অনেক টাকা হলে তোমার মেয়ের বাম পা ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আমার পক্ষে রিকশা চালিয়ে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ঢাকায় রিকশা চালাই। আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। সুমাইয়া আমার মেজ মেয়ে। অভাবের সংসার তাই বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। বাড়িতে থাকলে হয়তো বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতাম। তার এভাবে স্কুলে যাওয়া-আসা দেখে বুকে পাহাড় সমান কষ্ট হয়।’

উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ বলেন, ‘১০ বছরের সুমাইয়া আমাদের আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। চিকিৎসার অভাবে যেন তার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। সুমাইয়ার পড়াশুনা খুবই ভালো। সে আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। সুশিক্ষা অর্জন করে সে অনেক বড় হোক আমরা তার জন্য এই কামনা করি।’

সৌজন্যে: দেশ রূপান্তর

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.