বঙ্গবন্ধু ও চট্টগ্রামে তার সঙ্গীদের মধ্যে কত গভীর আস্থার সম্পর্ক ছিল তার প্রমাণ ছয় দফা ঘোষণার জন্য চট্টগ্রাম-কে বেছে নেয়া। স্বাধীনতার পথপরিক্রমায় জনমত গঠনে বারবার চট্টগ্রামে ছুটে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান, জেএম সেন হলের মাঠ, পলোগ্রাউন্ড ময়দান কিংবা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আজও কানপাতলে যেন শোনা যাবে জাতির পিতার তেজোদীপ্ত সেই ভাষণ।
চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের প্রতি অবিচল আস্থা থেকে ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল মন্ত্র, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা। সেই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে মুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু, আন্দোলন সংগ্রামের পাদপীঠ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, মুসলিম ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামের কিছু তরুণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পেছনে চট্টগ্রামের রাজনীতির কিংবদন্তি মরহুম এম এ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীর অবদান পাহাড়সম। বঙ্গবন্ধুর অবিচল আস্থা ছিল এ দুই মহারথীর ওপর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিনতম সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। যেদিন তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ইতিহাস সৃষ্টির দিনেও তিনি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন চট্টগ্রামের ওপর এবং তার বিশ্বস্ত জহুর আহমদ চৌধুরীর ওপর।
আরও পড়ুন: ১৫ টাকা করে চাল বিক্রি করবে সরকার
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ববঙ্গবন্ধু আমার মাকে ভাবি বলে ডাকতেন। আমার আজও মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু আমাদের বাসায় এসে আমার মাকে বলেছিলেন ভাবি আপনার হাতের রান্না খেতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা জহুর আহমেদ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ। লালদিঘী ময়দানে ছয় দফা দাবির ঘোষণা যখন দেবে তখন বাবার সাথে পরামর্শ করার স্মৃতিগুলো এখনো চোখে ভাসে।
স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে সে সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে ১৯৬৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শহরের স্থানীয় এক হোটেলে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সে হোটেল এখনো আছে স্মৃতি হয়ে —বলছিলেন চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সফর সঙ্গী সফর আলী।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু যখন জেলে। চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নগর আওয়ামী লীগ নেতারা।
বঙ্গবন্ধুর এ আস্থায় সাড়া দিয়ে জনসভা আয়োজনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ।
কথাগুলো বলছিলেন প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট ইব্রাহিম চৌধুরী বাবুল। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের নেতাদের উপর কতটুকু আস্থা থাকলে তিনি স্বয়ং নিজের মেয়ের বিবাহত্তোর সংবর্ধনা দিতে পারে এটাই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সর্বশেষ ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করতে চট্টগ্রামে আসেন জাতির এই মহান নেতা। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির সেই দিনটি এখনও যেন চোখের সামনে ভাসছে সফর আলীর।
বাংলার স্বাধীনতা লাভ কিংবা জাতির জনমত গঠনে চট্টগ্রামের মানুষের উপর বঙ্গবন্ধুর আস্থার প্রমাণ মিলে ৫৪, ৫৬ কিংবা ৬ দফা দাবিতে।