৪১ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ‘দালাল প্লাস’

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান দালাল প্লাস গ্রাহকদের ৪১ কোটি টাকা মেরে দিয়ে পালিয়েছে।ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দালাল প্লাস লোভনীয় সব ডিসকাউন্ট দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলায় পুলিশ এসব কথা জানায়।

জানা গেছে, গ্রাহকদের অভিযোগের তদন্ত ছাড়াও অর্থপাচার আইনে দালাল প্লাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে গত ১১ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি মডেল থানায় অর্থপাচার আইনে মামলা দায়ের করেছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে দালাল প্লাসের ৪১ কোটি ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা গ্রহণ ও স্থানান্তরের তথ্য পেয়েছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এরপর অর্থপাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি টর্নেডো, টাইফুন, কালবৈশাখী, তুফান নানান নামে গ্রাহকদের ভুয়া অফার করে। অফারে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের মোবাইল ফোন, ফ্ল্যাট, গাড়ি দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম হাতিয়ে নেয়।

মামলায় আসামি করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবু জুবায়ের হোসেন রাব্বি, চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন মুরাদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুক হক এবং অজ্ঞাত আরও তিন ব্যাক্তিকে।

দালাল প্লাস ছাড়া মামলায় আরও দুই প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো, ব্রোকার ডিজিটাল সল্যুশন লিমিটেড এবং ফ্রিডম ৭১ আইটি ইন্সটিটিউট।

এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, প্রতারণায় জড়িত বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহককে টাকা ফেরত দেওয়া ও পুনরায় ব্যবসা শুরু করতে যোগাযোগের জন্য আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালাল প্লাস গ্রাহকের আটকে থাকা টাকার মধ্যে ১০ জনকে ১৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ফেরত দেয়।

অর্থপাচার আইনে করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দালালপ্লাস ডট কমের সিটি ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখার হিসার থেকে গত বছরের মে মাসে ফ্রিডম ৭১ আইটি ইন্সটিটিউটের অ্যাকউন্টে ৫ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। পরে ওই ৫ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করে নেওয়া হয়। এরপর জুলাই মাসে একইভাবে ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

ফ্রিডম ৭১ আইটি ইন্সটিটিউটের হিসাব থেকে নেওয়া ওই ৫০ লাখ টাকা কাওয়াসাকি কারস-এর পূবালী ব্যাংকের উত্তরা মডেল টাউন ব্রাঞ্চের হিসাবে ট্রান্সফার করা হয়।

সূত্র ধরে সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাওয়াসাকি কারসের মালিক মোসা. সাজেদা খাতুন লোপাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে তারা জানতে পারেন, ফ্রিডম৭১ আইটি ইন্সটিউটের মালিক পরিচয়ে অভিযুক্ত জুবায়ের হোসেন রাব্বি দুটি ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো কেনার জন্য বুকিং মানি হিসেবে এই ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

প্রতারণার উদ্দেশ্যে দালালপ্লাস সারাদেশে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক আকৃষ্ট করে গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৪৫ হাজারের বেশি অর্ডার নেয়। এরমধ্যে ৮ হাজার অর্ডারের সম্পূর্ণ মূল্য বাবদ অগ্রীম ১২৬ কোটি ৮৩ লাখের অধিক টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও নগদে গ্রহণ করে। অর্ডারের অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধের পরও অভিযুক্তেরা এখনও ৩ হাজার ৬০৪টি অর্ডারের কোনো পণ্য সরবরাহ বা রিফান্ড করেনি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী পেন্ডিং অর্ডারগুলোর মোট বাজারমূল্য ৭৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার বেশি। অর্ডার নেওয়ার পর গ্রাহকদের পণ্য দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেলে অভিযুক্তরা অফিস বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট অভিযুক্তদের তথ্য পর্যালোচনা করে। এতে তারা আরও দেখতে পায় দালালপ্লাস ডট কম এবং ফ্রিডম৭১ আইটি ইন্সটিটিউট দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত সিটি ব্যাংকের হিসাব পরিচালনা করতেন জুবায়ের হোসেন রাব্বি। তিনি অন্য অভিযুক্তদের সহযোগিতায় দালাল প্লাসের অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন।

সিআইডি দালালপ্লাস ডট কমের নামে সিটি ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখার হিসাব এবং ব্রোকার ডিজিটাল সল্যুশন লিমিটেডের রোকেয়া সরণি শাখার হিসাব পর্যালোচনা করেছে। এতে ১৮০ কোটি ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকার অধিক জমা এবং ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার অধিক উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ওই দুই হিসাবে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি টাকা আছে।

প্রতারিত গ্রাহকেরা তাদের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি, মতিঝিল থানাসহ আদালতে কয়েকটি মামলা দায়ের করেন। তবে ব্যাপক সংখ্যক গ্রাহক পণ্য বা টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় এখনও মামলা করেননি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.