এক পায়ে একটা একটা সিঁড়ি মাড়িয়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে জনে জনে ঘুরছে সাথি। হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে দুই পায়ের হাঁটুতে কালচে দাগ পড়ে গেছে ছোট্ট সাথির। নাম সাথি হলেও তার সঙ্গী হয়ে আছে নিঃস্ব সৎ মা। তিন বছর আগে ভয়ংকর ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় সাথীর মা। অলৌকিকভাবে বেচে যায় সে। প্রাণে বেঁচে গেলেও হারাতে হয় একটি পা।
সে থেকেই সৎ মা নাজমার আরও চার ছেলেমেয়ের সাথে জায়গা হয় সাথীর। এই নাজমার ঘরে চার সন্তান রেখে সাথির মা রোকসানাকে বিয়ে করেছিলেন মোহাম্মদ রাসেল। শিশুটির দুর্দিনে বাবা না এলেও সৎমা নাজমা তাকে ফেলে দেননি।
নাজমা আক্তার এখন ভিক্ষা করে। ‘সাথি ও তার মা দুর্ঘটনায় পড়েছে শুনেই স্বামী রাসেল পালিয়ে যায়। আগে মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করতো। সাথি পঙ্গু হওয়ায় তাকে একা রেখে কোথাও যেতে পারে না তাই বাধ্য হয়েই দুজনে ভিক্ষা করে।
এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের এই সিঁড়ির নিচেই নাজমা -সাথীর সংসার। দিনে ৩শ থেকে ৪শ টাকা যা পায় তা দিয়ে চলে সংসার। সাথীর সুচিকিৎসার জন্য সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুুষদের এগিয়ে আসার আহবান হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনের।
চিটাগাং লাইভকে নাজমা আক্তার বলেন, এ ট্রেন থেকে পড়ে গেছিল, এরে তুলতে গিয়ে এর মা পড়ে ৩ টুকরা হয় গেছে, আমার চিন্তা এর একটা ঠ্যাঙ লাগাই দিতে পারলে, লেখাপড়া করাইতে পারলে কিছু একটা চারকি (চাকরি) করেতো খাইতে পারবে, আমি কী চিরদিন বাঁচমু? বাঁচমু না, এইহানে এহন কিছু সাহায্য তুলি।
তিনি বলেন, আমি তো এহন বেশি অভাবে আছি, দুটা মেয়ে মানুষ করা…। আমার তো এহন ঘর-দুয়ার কিছুই নাই, ভাড়া ঘরে থাহি। আমি অনেক কষ্টে আছি।
ছেলের চোখের চিকিৎসায় ৮/১০ বছর আগে একটি এনজিও থেকে ৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত সুদের চাপে আছে জানিয়ে নাজমা আক্তার বলেন, ৩ হাজার টাকা নিছিলাম, এখন হাজারে ৩শ’ টাকা সুদ দিতে হয়। এহন আমি মরে গেলে এই মাইয়ারে কে চাইব, তার একটা ঠ্যাঙ নাই, তারওপরে ও মেয়ে মানুষ।
হাসপাতালে সাথীকে প্রায় দেখতে যাওয়া এক যুবক জানান, দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আমি মেডিকেলে আসা যাওয়া করতেছি, দেখতেছি ওরা এভাবে ভিক্ষা করতেছে। ওরা খুব অসহায়। অনেক বড় বড় শিল্পপতি আছে, কেউ যদি ওদের দিকে নজর দেয়, সাহায্য সহযোগিতা করে, তাহলে ওরা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে।
নিয়তির বলি সাথি। আট দশটা বাচ্চার মতো হতে পারতো তার শৈশব। কিন্তু বিধাতার পরিকল্পনায় তার শৈশব সাজানো হয়েছে ভিন্নভাবে। কিন্তু মা হারা সাথীকে স্বাভাবিক জীবন দিতে আমরা কি পারবো না সামান্য কিছু করতে?