শয়তানের শাগরেদ প্যাট্রিক ডেভিড ম্যাকে: এক ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ব্রিটেনের অপরাধ জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বছর জেলে কাটানো ‘সিরিয়াল কিলার’ প্যাট্রিক ডেভিড ম্যাকে। কম করে ১১ জনকে খুনের কথা স্বীকার করেছে ম্যাকে। তবে পুলিশের দাবি, আরও দু’টি খুন করেছে সে।

ছোটবেলা থেকেই হিংস্র মনোবৃত্তি ছিল প্যাট্রিক ডেভিড ম্যাকে। স্কুলের সহপাঠী, অবলা পশুপাখিরাও তার অত্যাচারের শিকার। এমনকি, ছোটবেলায় তার থেকে কমবয়সি ছেলেকে খুনেরও চেষ্টা করেছিল বলে দাবি তার। বাধা পাওয়ায় সে চেষ্টা বিফলে যায়! মদ্যপ বাবার হাতে বেদম পিটুনি খেলেও তাঁর ছবি সঙ্গছাড়া করেনি। এতটাই ভালবাসত বাবাকে! তবে ১০ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মতোই মা-বোনেদের মারধর শুরু করেছিল প্যাট্রিক ডেভিড ম্যাকে।

বর্তমানে জেলেই আছে ম্যাকে। তবে বড়দিনের আগেই হয়তো জেল থেকে ছাড়া পেতে পারে সে। সেপ্টেম্বরে তার প্যারোলের আবেদনের শুনানি হতে পারে। ৬৯ বছরের ম্যাকে জেল থেকে ছাড়া পেলে যে কী হবে! তা ভেবেই নাকি শিউরে উঠছেন ব্রিটেনবাসী। বিশেষত, লন্ডন এবং কেন্টের বাসিন্দারা নাকি ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন।

ম্যাকে যে বড় হয়ে খুনি হবে, সে কথা নাকি আগেই টের পেয়েছিলেন তার মনোবিদেরা। ১৫ বছরের কিশোর ম্যাকের মনের হদিস জানার পর তাকে ‘সাইকোপ্যাথ’ তকমা দেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিওনার্ড কার। সে সময় তিনি আরও দাবি করেছিলেন, বড় হয়ে এই কিশোর ‘ঠান্ডামাথার সাইকোপ্যাথ খুনি’ হবে। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছিল!

ছোটবেলা থেকে ম্যাকের বায়নাক্কার অন্ত ছিল না। তার জন্য বাড়িতেও অশান্তি করত সে। মা-বোনেদের উপর মারধরের মাত্রা বেড়ে চলায় ছ’বছরের মধ্যে তাকে ১৮ বার ঘর থেকে দূরে বিশেষ স্কুলে এবং প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছিল। তবে সে সবে কাজের কাজ হয়নি। ১৮ বছর বয়সের আগেই বহু বার জেলযাত্রা হয়েছিল ম্যাকের।

সহবত শেখানোর জন্য ম্যাকেকে একটি বিশেষ স্কুলেও পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার শিক্ষকেরা দাবি করেছিলেন, ‘‘এ ছেলে বড় হয়ে কুখ্যাত খুনি হবে।’’

১৯৬৮ সালের অক্টোবরে ১৬ বছরের ম্যাকেকে লিভারপুলের মস সাইড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানেও তাঁকে ‘সাইকোপ্যাথ’ বলে চিহ্নিত করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তবে চার বছর হাসপাতালে থাকার পর ১৯৭২ সালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কম বয়স থেকেই নাৎসি ভাবধারার প্রতি আসক্তি জন্মেছিল ম্যাকের। নিজের একটা নামও ঠিক করে ফেলেছিল সে— ‘ফ্র্যাঙ্কলিন বোলভল্ট দ্য ফার্স্ট’।যৌবনে পা রাখার পর মিডলসেক্সের পারিবারিক বসতবাড়ি ছেড়ে লন্ডনে আস্তানা গেড়েছিল ম্যাকে। সে সময় থেকেই মাদক এবং সুরায় আসক্তির শুরু।

’৭২-এ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে চেলসি এবং নাইটব্রিজের অভিজাত এলাকায় চুরি করা থেকে ছোটখাটো অপরাধে হাত পাকানো শুরু করেছিল ম্যাকে। ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সে দিনই প্রথম ‘বড়সড় দাঁও’ মেরেছিল ম্যাকে। ইসাবেলা গ্রিফিথ নামে ৮৭ বছরের এক মহিলার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায় সে। ওই বৃদ্ধাকে মারধরের পর তাঁকে ছুরি মেরে খুন করে।

পুলিশ জানিয়েছিল, খুনের আগে ইসাবেলার শ্বাসরোধ করেছিল ম্যাকে। ওই ঘটনায় ম্যাকেই যে দায়ী, গোড়ায় তা ধরতে পারেননি তদন্তকারীরা। ওই খুনের ঘটনার ১৩ মাস পরে অ্যাডেল প্রাইস নামে আরও এক বৃদ্ধা নিজের বাড়িতে খুন হন। ৮৯ বছরের অ্যাডেলের খুনের ধাঁচও প্রায় একই রকম ছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, খুনের সময় অ্যাডেলের নাতনি ওই বাড়িতে ছিলেন না। খুনের পর বাড়িতে ঢোকেন তিনি। খুনের পর অ্যাডেলের নাতনিকে দেখে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাঁর কাছে এক গ্লাস জল খেতে চেয়েছিল ম্যাকে। কোনও কিছু না জেনেবুঝেই জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়েছিলেন নাতনি। এই দুই বৃদ্ধার খুনি যে একই ব্যক্তি, তদন্তে নেমে তা অনুমান করতে সময় লাগেনি পুলিশের।

দু’টি খুনের পর ধারাবাহিক ভাবে হত্যালীলা চালিয়ে গিয়েছে ম্যাকে। তবে দীর্ঘ দিন পুলিশের কাছে অধরাই ছিল সে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে তার নানা অপরাধ। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ে ম্যাকে।

গোড়ায় মনে করা হয়েছিল, তিনটি খুন করেছে ম্যাকে। তবে পুলিশি জেরায় ম্যাকে স্বীকার করে, তিনটি নয়। মোট ১১ জনকে খুনে করেছে। যদিও তদন্তের পর পুলিশের দাবি, খুনের সংখ্যাটা আসলে ১৩!

১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ম্যাকেকে ২০ বছরের কারাবাসের সাজা দেয় আদালত। তবে একের পর এক খুনের জেরে ৪৭ বছরেও জেল থেকে বেরোতে পারেনি ম্যাকে। তত দিনে নানা তথ্যচিত্র, বইয়ের কেন্দ্রে চলে এসেছে সে। ম্যাকের নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ‘মনস্টার অব বেলগ্রাভিয়া’, ‘সাইকোপ্যাথ’ বা ‘শয়তানের শাগরেদ’ তকমা। খোদ ম্যাকে অবশ্য নিজেকে ডেভিড গ্রোভস বলে ডাকতেই পছন্দ করেন!

সূত্র: আনন্দবাজার

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.