ডলার সংকট চরমে, ১১২ টাকায়ও মিলছে না খোলা বাজারে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Print

ডলারের সংকট থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না বাংলাদেশ। প্রতিদিনই অস্থিরতা বাড়ছে ডলারের বাজারে। বিপরীতে কমছে টাকার মান। বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খোলা বাজারে ডলার নেই, মিলছে না ১১২ টাকা দিয়েও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছিল ডলারের খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট)। এক বছরের ব্যবধানে প্রতিটি ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে উঠে গিয়েছিল ১০৫ টাকা পর্যন্ত। এতদিন মূল্য বৃদ্ধির যে রেকর্ড ছিল গতকাল তা ভেঙে গেছে একদিনেই। খোলাবাজারে গতকাল প্রতি ডলার ১১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। রেকর্ড এ দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাননি ক্রেতারা। পরিমাণ বেশি হলে দুই-তিনটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ঘুরে ডলার কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।
সোমবারও দেশের কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছিল ১০৪ থেকে ১০৫ টাকায়। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ডলারপ্রতি ৭-৮ টাকা বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মেনে নিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
বণিক বার্তার প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে বলা হয়, আগে দুর্নীতিবাজরা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা ঘরে লুকিয়ে রাখত। তবে দুর্নীতি বাড়ায় ঘুষের বাজারের পরিস্থিতিও পাল্টে গেছে। এখন বড় অংকের ঘুষের লেনদেনও হচ্ছে ডলারে। আবার সম্পদশালীদের অনেকে বাজার থেকে ডলার কিনে সংরক্ষণ করছেন। বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় অনেকে বিনিয়োগ হিসেবে ডলার কিনে রাখছেন। এসব কারণে খোলাবাজারে ডলার দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে।
যারা চিকিৎসাসহ জরুরী প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়! একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে ৫ হাজার ডলার খুঁজছিলেন। মতিঝিলের ভাসমান মুদ্রা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডলার কিনতে গিয়ে মিজানুরের চোখ কপালে ওঠার পরিস্থিতি। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম ১০৫ টাকার মধ্যে ডলার কিনতে পারব। কিন্তু অন্তত ১০ জনের সঙ্গে দামাদামি করেছি। কেউই ১১২ টাকার নিচে ডলার বিক্রি করতে রাজি হয়নি। আবার কয়েকজন বলেছে, একসঙ্গে পাঁচ হাজার ডলার বিক্রি করার সামর্থ্য তাদের নেই। কয়েকজন থেকে সংগ্রহ করে দিতে চেয়েছেন।
কার্ব মার্কেটের মতোই গতকাল দেশের ব্যাংক খাতে ডলারের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ডলারের তীব্র সংকটে থাকা কোনো কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউজগুলোর কাছ থেকে ১০৬ টাকা পর্যন্ত ডলার কিনেছেন। বেশির ভাগ ব্যাংক এক্ষেত্রে ডলার কিনেছে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকায়। ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকা পর্যন্ত ডলার বিক্রি করেছে।
টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে প্রতিদিনই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকালও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। ২৬ জুলাই পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ৯৯ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস শেষ হওয়ার আগেই প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হলেও বাজার স্থিতিশীল হয়নি। উল্টো দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততটাই প্রকট হয়ে উঠছে। ২০২১-২২ অর্থবছরেও ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের (২০২১-২২) মে পর্যন্ত ১১ মাসেই দেশের আমদানি ব্যয় ছাড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। ইতিহাস সৃষ্টি করা এ আমদানি ব্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্যের সবকটি সূচকে। দিন যত যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলো ততই নাজুক হয়ে উঠছে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ১৫ শতাংশেরও বেশি। গত মে পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসেই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। একই সময়ে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতি ঠেকেছে ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে। পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। চাপের মুখে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০২১ সালে ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত হওয়া রিজার্ভের পরিমাণ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। যদিও ডলারের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

সূত্রঃ বণিক বার্তা

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.