স্পেনের গ্রামপ্রেমী এক শিক্ষকের কথা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
spain

প্রায় সব দেশেই রুটিরুজির তাগিদে মানুষ শহরে ভিড় করছেন। গ্রামের পৈতৃক ভিটে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। স্পেনের এক শিক্ষক নিজের লুপ্তপ্রায় গ্রামকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে আন্তরিক উদ্যোগ নিচ্ছেন।

স্পেনের উত্তরে বিলবাও শহরের প্রায় একশ কিলোমিটার দূরে ছবির মতো সুন্দর এক গ্রাম পুয়েন্তেদেই। সেখানেই ইভান আলোনসোর বাসা। ২৮ বছর বয়সী এই শিক্ষক কর্মসূত্রে আর সেখানে না থাকলেও নিয়মিত ফিরে আসেন।

গ্রামের প্রতি টান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার কাছে পুয়েন্তেদেই অনেক কিছু। আসলে সবটাই। আমার বাবা-মা এই গ্রামে জন্মেছেন, আমিও জন্মেছি। প্রত্যেক সপ্তাহান্তে এখানে আসি। প্রাণের টান খুবই বেশি এবং এমনটাই থাকবে।

স্পেনের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলির তালিকায় পুয়েন্তেদেইয়ের নাম সবে অন্তর্গত হয়েছে। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীর এই গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইভান আলোনসোর মনে দুশ্চিন্তা রয়েছে। সৌন্দর্য ও বিশেষ ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য সত্ত্বেও গ্রামটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলেছে। জনসংখ্যা ৫০-এরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইভান আলোনসো জানান, গত ৩০ বছরে গ্রামে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। আগে গ্রীষ্মে গ্রাম ভরে যেত। প্রতি সপ্তাহান্তে অনেক বন্ধু নিয়ে আমরা এখানে আসতাম। এখন অনেক কম লোক আসে। তবে পর্যটকদের কল্যাণে গ্রামে আবার জনসমাগম হচ্ছে। অনুরাগীর সংখ্যা আরও বাড়লে গ্রামের উপকার হবে।

বহু বছর ধরে সেখানে কোনো স্কুল নেই। কোনো কমবয়সী পরিবারও সেখানে থাকে না। ইভান স্থানীয় গির্জার ঘণ্টা বাদক আন্তোনিয়ো সাইস-এর সঙ্গে দেখা করছেন। ৮১ বছর বয়সী এই মানুষটি আজীবন পুয়েন্তেদেই গ্রামেই বাস করেছেন।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আগের সঙ্গে আজকের এই গ্রামের কোনো মিল নেই। আগে এখানে চাষবাস, পশুপালন হতো। কিন্তু গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে পরিস্থিতি বদলে গেলো। তখন চাষবাসের গুরুত্ব কমে গেল। এমন অবহেলার ফলে মানুষ শিল্পক্ষেত্রে কাজের সন্ধান করতে লাগলো। অবশ্যই বিলবাও শহরে অনেক বেশি শিল্প রয়েছে।

পুয়েন্তেদেই গ্রামটিকে আবার তরুণ প্রজন্মের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে ইভান আলোনসো অন্যদের সঙ্গে মিলে গ্রীষ্মে লা কুকানিয়া নামের এক উৎসব আয়োজন করেন। তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারীরা গ্রাম ও বাইরে থেকে আসেন। এই খেলায় পাঁচ-ছয় মিটার উঁচু থাম থেকে একটি পতাকা ধরার চেষ্টা করতে হয়।

সমস্যা হলো, সেই থামে তেল মাখানো থাকে। ফলে না পিছলে পতাকা ধরতে হলে খুব সাবধান থাকতে হয়। ইভান আলোনসো নিজের গ্রাম সম্পর্কে এখনো আশা ছাড়েননি। নতুন স্বীকৃতিও গ্রামের বিকাশে বাড়তি সুযোগ বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি মনে করেন, বর্তমানে ৫০ জন মানুষ থাকলেও পুয়েন্তেদেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না বলে আমার আশা। তাদের মধ্যে আমিও কিন্তু আছি। সারা বছর এখানে না থাকলেও গ্রামে আমার নাম নথিভুক্ত রয়েছে। আমার ধারণা, গ্রাম মোটেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না কারণ শুধু সৌন্দর্য নয়, পুয়েন্তেদেইয়ে অনেক মানুষের শিকড় রয়েছে। তারাও গ্রামের মৃত্যু চান না। লুপ্তপ্রায় এই সুন্দর গ্রামটি শুধু পর্যটকদের জন্যই আকর্ষণীয় হয়ে থাকতে চায় না।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.