সদ্য সমাপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট আর টি২০ সিরিজ খেললেও ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। তাকে ছাড়াই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। এবার জিম্বাবুয়ে সফরেও সাদা বলের দুটি সিরিজে থাকছেন না তারকা অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ের মাটিতে সমান তিনটি টি২০ ও তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচই রাজধানী হারারেতে অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ জুলাই শনিবার প্রথম টি২০ দিয়ে শুরু এ দ্বৈরথ। সাকিব না থাকলেও প্রিয় প্রতিপক্ষ বলে এই সিরিজে ফেভারিট হিসেবেই নামবে বাংলাদেশ।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল চলতি বছরের ব্যস্ত সূচির কারণে এ সিরিজে দ্বিতীয় সারির দল পাঠাবে বাংলাদেশ, সিরিজটা ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগেরও অংশ নয়। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশনস চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানালেন অন্য কথা। তিনি বললেন, বেশির ভাগ সিনিয়র ক্রিকেটারই এ সিরিজে থাকছে। তারা সবাই খেলতে চায়। সাকিব আমাদের জানিয়েছে যে সে যেতে চায় না। পূর্ণ শক্তির একটি দলই জিম্বাবুয়েতে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের অংশ না হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ এক সিরিজ। সেখানে আমরা ভালো করতে চাই। অনেকে এখানে দ্বিতীয় সারির একটি দল দেখছিল, কিন্তু না, আমরা শক্তিশালী দলই পাঠাতে চাই।
জিম্বাবুয়েতে টি২০ সিরিজে অবশ্য তামিমকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তৃতীয় ওয়ানডে শেষে তামিম টুইটার বার্তায় জানিয়ে দেন, তিনি আর টি২০ খেলবেন না। তার আগে এ বছরের শুরুর দিকে তিনি এ ফরম্যাট থেকে ছয় মাসের বিরতি নিয়েছিলেন। টি২০ থেকে অবসর নেয়ায় জিম্বাবুয়ে সফরে শুধু ওয়ানডে খেলবেন এ ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলনায়ক।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৭৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, সর্বোচ্চ ৫০টি জয়ও তাদের বিপক্ষে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১টি শ্রীলংকার বিপক্ষে এবং ৪৪টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বাংলাদেশ টি২০ ম্যাচও যুগ্মভাবে সবচেয়ে বেশি খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সমান ১৬টি টি২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। টি২০তে সর্বোচ্চ ১১টি জয় এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৮টি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ, অথচ অন্য ৯টি দল মিলিয়ে জয় এসেছে ৮টি!
১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। এর মধ্যে ৫০টি জয় নিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে, আর জিম্বাবুয়ের জয় ২৮টি। এখন পর্যন্ত ১৮টি ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ ১২টিতে আর জিম্বাবুয়ে ছয়টি জিতেছে। সর্বশেষ পাঁচ সিরিজেই বাংলাদেশ জিতেছে, যার মধ্যে চারটিই ছিল বাংলাদেশের মাটিতে। উল্লেখ্য, এ পাঁচটি সিরিজেই প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়লাভ করে টাইগাররা। অবশ্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে পরপর দুবার জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ওয়ানডে সিরিজে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।
টি২০ ফরম্যাটেও বাংলাদেশ বেশি জয় পেয়েছে। ছয়টি টি২০ সিরিজ খেলে বাংলাদেশকে কখনো হারাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ তিনটিতে জিতেছে, বাকি তিনটি ড্র হয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে হারারেতে দুই দলের সর্বশেষ টি২০ সিরিজটা ২-১-এ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সর্বশেষ সিরিজ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। টেস্ট ও টি২০ সিরিজটা ২-০তে হারলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। অবশ্য জিম্বাবুয়ের মাঠে শুরুতেই রয়েছে টি২০ সিরিজ, যে ফরম্যাটে বাংলাদেশের রেকর্ড সন্তোষজনক নয়। উইন্ডিজে ব্যর্থতায় নেতৃত্ব হারিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, টি২০ দলে জায়গাও পাননি তিনি। যদিও আছেন ওয়ানডে দলে। শুক্রবার মাহমুদউল্লাহকে সরিয়ে নুরুল হাসান সোহানকে জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য টি২০ দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে।
জিম্বাবুয়ে সফরের টি২০ দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও হাসান মাহমুদ। মিরাজ তো টেস্ট ও ওয়ানডে দলের নিয়মিত মুখ, আর শান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচেই খেলেছেন। এবার টি২০ দলেও সুযোগ পাচ্ছেন। এখনো অভিষেক না ঘটা ইমন বামহাতি ব্যাটসম্যান, আর তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি২০ ম্যাচ খেলা হাসান মাহমুদ চোট থেকে সেরে উঠে দলে ডাক পেয়েছেন।
ওয়ানডে দলেও জায়গা করে নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ইয়াসির আলী ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন চোট থেকে সেরে ওঠেননি। আর খারাপ পারফর্ম করায় বাদ পড়েছেন এবাদত হোসেন।
বাংলাদেশ টি২০ স্কোয়াড: মুনিম শাহরিয়ার, এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, মোসাদ্দেক হোসেন, নাজমুল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও পারভেজ হোসেন।
বাংলাদেশ ওয়ানডে স্কোয়াড: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, এনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলাম।