ম্যাঙ্গো ম্যান কলিম উল্লাহ খান

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
কলিম উল্লাহ খান
নিজের বাগানে আম পরিচর্যা করছেন কলিম উল্লাহ খান। ছবি সংগৃহীত

প্রতিদিন সকালে উঠে প্রার্থনা সেরে মাইলখানেক হেঁটে শতবর্ষী একটি আমগাছের নিচে যান কলিম উল্লাহ খান। ভারতের উত্তর প্রদেশের মালিহাবাদ এলাকার বাসিন্দা ৮২ বছর বয়সী কলিম উল্লাহ খান এই শতবর্ষী আমগাছটি থেকে প্রায় ৩০০ প্রজাতির নতুন আম উদ্ভাবন করেছেন। এসব আম স্বাদে, গন্ধে, আকারে ও প্রকৃতিতে আলাদা। তাঁর উদ্ভাবনী কাজের জন্য ভারতে তিনি আমমানব বা ম্যাঙ্গোম্যান হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।

কলিম উল্লাহ খান যখন প্রতিদিন সকালে হেঁটে আমের বাগানে যান, চশমার ভেতর দিয়ে তাঁর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। পাতাগুলো ছুঁয়ে দেখেন তিনি। আম পেকেছে কি না, তার গন্ধ শুঁকে দেখেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে প্রখর রোদে কঠোর পরিশ্রম করার পর এটাই আমার পুরস্কার। খালি চোখে দেখলে এটাকে শুধুই বাগান বলে মনে হবে। কিন্তু মন থেকে দেখলে এই গাছ, এই বাগানকে বিশ্বের বৃহত্তম আম কলেজ বলে মনে হবে।’

লেখাপড়া খুব বেশিদূর করা হয়ে ওঠেনি কলিম উল্লাহর। স্কুল থেকে ঝরে পড়েছিলেন তিনি। তরুণ বয়সেই কলম বা গ্রাফটিং পদ্ধতিতে আমের জাত নিয়ে প্রথম পরীক্ষা শুরু করেন। শুরুর দিকে তিনি একটি গাছ বড় করে তোলেন, যেখানে সাত ধরনের নতুন আম পাওয়া যেত। কিন্তু গাছটি ঝড়ে উপড়ে যায়। এরপর ১৯৮৭ সালে শতবর্ষী একটি আমগাছ থেকে নমুনা নিয়ে তিনি আবার পরীক্ষা শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি ৩০০ নতুন প্রজাতির আম উদ্ভাবনে সফল হন। তিনি দাবি করেন, তাঁর উদ্ভাবিত প্রতিটি জাতই স্বাদ, গঠন, রং ও আকারে আলাদা।

কলিম উল্লাহ খান তাঁর উদ্ভাবিত প্রথম দিকের একটি প্রজাতির আমের নাম রাখেন, বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের নামে। ১৯৯৪ সালে বিশ্বসুন্দরী নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া। এ জাতকেই এখন পর্যন্ত কলিম উল্লাহ খানের সেরা উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ জাতের আম ঐশ্বরিয়ার মতোই সুন্দর। একেকটি আমের ওজন এক কেজির বেশি হয়। অত্যন্ত মিষ্টি এ আমের বাইরের দিকে লাল রঙের আভা হয়।’ কলিম উল্লাহর উদ্ভাবিত আমের মধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের নামের আমও রয়েছে। তাঁর উদ্ভাবিত আরেকটি জনপ্রিয় জাতের আম হচ্ছে আনারকলি। আট সন্তানের জনক কলিম উল্লাহ বলেন, মানুষের আসা-যাওয়া থাকবেই। কিন্তু এ আমগুলো চিরদিন থেকে যাবে। মানুষ যখন শচীন আম খাবে, তখন এই ক্রিকেটারের নাম স্মরণে রাখবে।

কলিম উল্লাহর ৯ মিটার উঁচু একটি আমগাছের শক্ত ডালগুলোর পাতা প্রখর রোদে শীতল ছায়া দেয়। এটির পাতা বিভিন্ন ধরন ও গন্ধের। কিছু জায়গায় হলুদ ও চকচকে, আবার কিছু জায়গায় গাঢ় সবুজ। তিনি বলেন, মানুষের আঙুলের ছাপ যেমন এক রকম হয় না, তেমনি আমও এক রকম নয়। মানুষের মতোই প্রকৃতি আমে ভিন্নতা দিয়েছে।

কলিম উল্লাহর আমের কলম করার পদ্ধতিও বেশ জটিল। একটি প্রজাতি থেকে সযত্নে শাখা কেটে অন্য প্রজাতির সঙ্গে কলম করার পর সংযোগস্থলে টেপ পেঁচিয়ে দেন তিনি। কলিম উল্লাহ বলেন, সংযোগটি শক্ত হয়ে গেলে টেপ সরিয়ে ফেলা হবে। নতুন শাখাটি পরের মৌসুমে প্রস্তুত হবে এবং দুই বছর পরে একটি নতুন বৈচিত্র্য তৈরি করবে।

দেশ ও বিদেশে দক্ষতার জন্য ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন কলিম উল্লাহ। ২০০৮ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অর্জন করেন তিনি। ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমন্ত্রণও পেয়েছেন এই উদ্ভাবক। তিনি বলেন, ‘আমি মরুভূমিতেও আম জন্মাতে পারি।’

কলিম উল্লাহর বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। ছবি সংগৃহীত

ভারত আমের বৃহত্তম উৎপাদক দেশ। বিশ্বব্যাপী যত আম উৎপাদন হয়, তার অর্ধেকই হয় ভারতে। ভারতের উত্তর প্রদেশের মালিহাবাদে ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকায় আম উৎপাদিত হয়। বংশপরম্পরায় বেশির ভাগ পরিবারিক মালিকানাধীন সেখানকার বাগানগুলো আমপ্রেমীদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অল ইন্ডিয়া ম্যাঙ্গো গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, আমচাষিরা এখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত। এ বছর দাবদাহে ফলনের ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমের প্রজাতি কমেছে। তবে কলিম উল্লাহ খান এর জন্য আম চাষের পদ্ধতি, সস্তা সার ও কীটনাশকের ব্যবহারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, চাষিরা দূরত্ব কম রেখে একসঙ্গে বেশি গাছ রোপণ করছেন। এতে পাতায় আর্দ্রতা ও শিশিরের জন্য জায়গা থাকছে কম।

নিজের সম্পর্কে এ উদ্ভাবক বলেন, এখনো ভালো বোধ করেন তিনি। সম্প্রতি আমবাগানের মধ্যেই বাড়ি করেছেন, যাতে গাছের কাছাকাছি থাকতে পারেন। তিনি জানান, জীবনের শেষ অবধি আম নিয়েই কাজ করে যেতে চান।

সূত্র: প্রথম আলো

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.