ইংলিশদের কাঁদিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়ে ৫৩ বছর পর ইউরোর ট্রফিটা রোমে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আজ্জুরিরা।

খেলার নির্ধারিত সময় ছিল ১-১ ড্র। এরপর যোগ করা হয় আরো ৩০ মিনিট। সেখানেও গোল করতে ব্যর্থ হন দুই দলের ফুটবলাররা। যার ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারেই হলো নিষ্পত্তি। ইংল্যান্ডের সমস্ত স্বপ্ন চূর্ণ হলো টাইব্রেকার নামক লটারিতে। যেখানে ইংলিশ ফুটবলাররা একের পর এক মিস করেছেন। অন্যদিকে ইতালিও মিস করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমার অসাধারণ নৈপূণ্যে জয় হলো ইতালির। ৫৩ বছর পর আবারও ইউরোর শিরোপা উঠলো ইতালিয়ানদের হাতে।

টাইব্রেকারে ইতালির প্রথমটি গোল। শট নেন ডোমেনিকো বেরারদি। ১-০। ইংল্যান্ডের প্রথম শট নেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন, গোল। ১-১। ইতালির দ্বিতীয় শট নেন আন্দ্রে বেলোত্তি। ঠেকিয়ে দেন জর্ডান পিকফোর্ড। ১-১। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় শট, হ্যারি মাগুইরে। ১-২। ইতালির তৃতীয় শট নেন লিওনার্দো বনুচ্চি। গোল। ২-২।

ইংল্যান্ডের তৃতীয় শট নেন মার্কাস রাশফোর্ড। কিন্তু বলটি তিনি মেরে দেন বাম পাশের পোস্টে। গোল হলো না। ২-২। ইতালির চতুর্থ শট নেন ফেডেরিকো বার্নার্ডেশি গোল। ৩-২। ইংল্যান্ডের চতুর্থ শট নেন জ্যাডন সানচো। ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষ ডোনারুমা। ৩-২।

ইতালির পঞ্চম তথা শেষ নন জর্জিনহো। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। ৩-২। ইংল্যান্ডের শেষ শট নেন বুকাইয়ো সাকা। তার শটও ঠেকিয়ে দেন ডোনারুমা। ৩-২ ব্যবধানে জিতে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি।

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর এই প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশরা। ইউরোতে তো এই প্রথম। নিজেদের মাঠ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফাইনালে। প্রায় ৬৬ হাজার দর্শক-সমর্থকের অধিকাংশই গলা ফাটালেন হ্যারি কেইনদের হয়ে। কিন্তু লাভ হলো না। এবারও আফসোস নিয়েই ফিরতে হলো ইংলিশদের।

বড় মঞ্চে আবারও ইতালির কাছে হারতে হলো ইংল্যান্ড। এর আগে কোপা এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে চারবার দেখা হয়েছিল দু’দেশের। প্রতিবারই পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। শেষ হাসি হাসলো ইতালিয়ানরাই।

২০১৮ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি যে দলটি, তারাই কি না নিজেদেরকে আমূল পরিবর্তন করে ফেললো কিভাবে, তা এই ইউরো প্রমাণ করে দেখাল। কোচ রবার্তো মানচিনির অধীনে গত দুই বছর কোনো পরাজয় নেই ইতালির। টানা ৩৪টি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়লো ইতালি। সে সঙ্গে চতুর্থ দেশ হিসেবে দুটি করে ইউরো জয়ের রেকর্ড গড়লো তারা।

ইংল্যান্ড আর ইতালির মধ্যে ইউরোর ফাইনালকে মেগা ফাইনাল এ কারণেই হয়তো বলা হচ্ছিল। টান টান উত্তেজনা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। এমন ফাইনালেই কি না শুরুর চাপটা নিতে পারলো না ইতালি। বরং, প্রচণ্ড গতির এক প্রদর্শণীতেই শুরুতেই গোল আদায় করে নিয়েছিলো ইংল্যান্ড।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথমে কর্নার কিক পায় ইতালি। ইনসিগনের করা কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ারই করা নয় শুধু নিজেদের নিয়ন্ত্রণেও ধরে রাখে ইংল্যান্ড। উঠে যায় কাউন্টার অ্যাটাকে।

ইতালির বক্সের ডান পাশ থেকে বাম পাশে লম্বা পাস দেন কিয়েরান ট্রিপিয়ার। দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা লুক শ ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন তাতে। মুহূর্তেই বলটি জড়িয়ে গেলো ইতালির জালে।

বুকাইয়ো সাকার পরিবর্তে কেন গ্যারেথ সাউথগেট কিয়েরান ট্রিপিয়ারকে মাঠে নামালেন, সেটা শুরুতেই বুঝিয়ে দিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার। তার ঠিকানা লেখা নিখুঁত পাসে যেভাবে বাঁ-পায়ের শটে ইতালির জালে বল জড়ালেন, তা রীতিমত বিস্ময়কর।

শুরু থেকেই ইতালি এবং ইংল্যান্ড গতিময় ফুটবল উপহার দেয়া শুরু করেছে। প্রতি মুহূর্তেই বল ছুটে চলেছে মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। যে কারণে প্রথম মিনিটেই গোলের চেষ্টা ইতালির। হ্যারি ম্যাগুইরে কর্নারের বিনিময়ে সে চেষ্টা প্রতিহত করেন।

কিন্তু সেই কর্নার কিকই যে ইতালির জন্য উল্টো বিভীষিকা হয়ে দেখা দেবে, তা কে জানতো? বাম প্রান্ত ধরে ইংল্যান্ড বল নিয়ে এগুনো শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যেই বল দিক বদলে চলে যায় ডানপ্রান্তে। সেখানে দ্রুত গতিতে বল নিয়ে এগিয়ে যান ট্রিপিয়ার। ইতালির ডিফেন্ডার সামনে থাকলেও সময় নিয়ে, দেখে-শুনে ক্রস নেন তিনি। পাঠিয়ে দেন আবারও বাঁ-প্রান্তে। যেখানে বাজিমাত করলেন লুক শ।

এই একটি গোল করেই রক্ষণকে জমাট বাধিয়ে ফেলে ইংলিশরা। গতিময় ফুটবল এবং পাল্টা আক্রমণের ধার যতটা আছে, ততটা নিজেদের গোল রক্ষায় যেন বেশি মনযোগ দেখা গেছে ইংল্যান্ডকে।

যে কারণে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের অর্ধেক সময় পার হওয়ার পরই (৬৭ মিনিটে) দুর্দান্ত এক গোলে ইতালিকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন অভিজ্ঞ ফুটবলার বনুচ্চি। ইনসিগনের নেয়া কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বলটিকে হেড করেন ভেরাত্তি। ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড সেটিকে ফেরানোর চেষ্টা করলেও সাইড বারে লেগে ফিরে আসে।

কিন্তু ফিরতি বলটি আর রক্ষা পেলো না। বনুচ্চির বিদ্যুৎ গতির শট ইংল্যান্ডের জাল এফোঁড়-এফোঁড় করে দেয়।

দ্বিতীয় মিনিটে গোল হজম করার পর জ্বলে ওঠে ইতালিয়ানরা। ৮ম মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের পোস্টে শট নেন ইনসাইন। যদিও তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৮ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন ইনসিগনে। যদিও তার আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৩৫ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সিয়েসা। তার আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গোল বঞ্চিত হয় ইতালি। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার খানিক আগে (৪৫+২) ভেরাত্তির আক্রমণ প্রতিহত করেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিকফোর্ড। ২ মিনিট পর আক্রমণে আসেন বনুচ্চি। সেটাও ব্যর্থ হয়।

৫১ ও ৫৩ মিনিটের মাথায় আবারও গোলের চেষ্টা। কিন্তু এবারও ইনসিগনেনের শট টার্গেটে ছিল না। ৫৬ মিনিটে হ্যারি ম্যাগুইরে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ডি বক্সের মধ্যে; কিন্তু আপাতত রক্ষা মেলে ইতালির।

৫৭ মিনিটের মাথায় ইনসিগনে শট নেন ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে। আক্রমণ প্রহিত হয় পিকফোর্ডের দস্তানায়। ৬২ মিনিটের মাথায় ফের ইংল্যান্ডের পতন রোধ করেন পিকফোর্ড। সিয়েসার আক্রমণ প্রতিহত করেন তিনি। ৬৭ মিনিটে এসেই গোলরক্ষক পিকফোর্ডকে পরাস্ত করে গোলের দেখা যায় ইতালি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.