প্রতিবছর কোরবানির আগে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি করা হয়। অনেক বছর ধরে আমদানি হয়ে আসছে। তবে এবার দেশীয় খামারিদের লোকসানের কথা বিবেচনা করে মিয়ানমারের পশু আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কিছু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি করে আসছে। দেশীয় পশুকে প্রাধান্য দিয়ে এখন সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে আসা প্রতিটি গরু- মহিষের বিপরীতে ৫০০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হতো। এভাবে বিদেশি গরু আমদানির ফলে স্থানীয় পশু খামারিরা বিপাকে পড়ে যায়।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শওকত আলী চট্টগ্রাম নিউজকে বলেন, টেকনাফ উপজেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা ৮ হাজার। এ উপজেলায় ছোট-বড় আড়াই শতাধিক পশুর খামার রয়েছে। এরমধ্য ৫০টি বড় খামার রয়েছে। এসব খামারে ১৮ হাজার গরু, মহিষ ছাগল ও ভেড়া রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, ‘জেলা চোরাচালান নিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পশু আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। কেউ এ আদেশ অমান্য করলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টেকনাফে পশু ব্যবসায়ীরা বলছেন- কোরবানি ঈদ সামনে রেখে হঠাৎ মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তটি ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ সংবাদ। এতে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে।
কাস্টমস সূত্র জানা যায়, চলতি বছরের মে ও জুন মাসে মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার ৮৬৮টি গরু ও ৪ হাজার ২৫৮টি মহিষ এসেছে। এর আগে মার্চ-এপ্রিল মাসে ১১ হাজার ৮৮৬টি গরু ও ২ হাজার ৪২৪টি মহিষ এসেছিল।
টেকনাফ কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের আওতাধীন মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পশুর একমাত্র পথ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর। এটি ২০০৩ সালে ২৫ মে মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে পশু আসা রোধ করতে এটি চালু করা হয়েছিল।
বিজিবির সীমান্ত চৌকি-সংলগ্ন এলাকায় এ করিডর। মিয়ানমার থেকে আসা পশু প্রথমে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে রাজস্ব জমা এবং কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের অনুমতি নিয়ে পশুগুলো করিডর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়।
অপরদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারাদেশে চালু করা হয়েছে অনলাইন কোরবানির পশুর হাট। সে ধারাবাহিকতায় টেকনাফ উপজেলার পশু খামারি ও ক্রেতাদের সুবিধার্থে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চালু করা হয়েছে অনলাইন কোরবানির পশুর হাট।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন,করোনা মহামারীর মধ্যে খামারি ও কোরবানি দাতাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন এবং ঝুঁকি এড়িয়ে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য টেকনাফ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে অনলাইন কোরবানির পশুর হাটের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে চালু হওয়া এই হাট খামারি ও কোরবানি দাতাদের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে। এই গ্রুপে এড হয়ে নিশ্চিন্তে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন খামারি ও ক্রেতারা।