পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশটিতে। একদিকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম অন্যদিকে খাবারের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষ কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছে। এ অবস্থায় চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা করেছে পাকিস্তান।
দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিভিন্ন প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। উল্টো এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ১৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৮০ জন শিশু রয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। এতে তিন কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রহমান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবে গেছে। দেশটির পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যায় যে পাকিস্তানের ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে আনতে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি লাগবে। বন্যায় দেশটির হাজার হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে করে ঘরছাড়া লাখ লাখ মানুষ, সেইসঙ্গে বন্যা তাদের নিঃস্ব করেছে। অনেকে এখন তাঁবুর নিচে বসবাস করছেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ বাংলাদেশের
বানুল নামে এক নারী বিবিসিকে বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি তাঁবুর নিচে বাস করছি, কোনো ঘর নেই, সবার জন্য আছে শুধু আছে এই তাঁবু। আমাদের সাহায্য দরকার, আমরা শুধু আমাদের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি। এর মধ্যে দেশটির খাবারের দাম আকাশচুম্বী। এতে আরও বিপাকে দেশটির সাধারণ মানুষ। দিশেহারা লাখো মানুষের খাবার কেনার মতোও কিছু নেই।
জাহিদা বিবি নামে এক নারী বলেন, বন্যার কারণে খাবারের দাম অনেক বেড়েছে, এর কারণে আমরা কোনো কিছুই কিনতে পারছি না। তিনি লাহোরের কেন্দ্রীয় শহর থেকে রাতের খাবারের জন্য সবজি কিনতে আসছিলেন। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে তিনি বাজারের তালিকা থেকে অনেক খাবারই বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন কি করতে পারি, খাবারের এতো দাম বেড়েছে কিন্তু আমাদের কাছে অর্থ নেই।
দেশটিতে সব থেকে পেঁয়াজ ও টমেটোর দাম চড়া হয়েছে। এতেই বেশি বিপদে পড়েছেন দেশটির মানুষ। এই দুই পণ্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বন্যার কারণে দেশটির লাখ লাখ হেক্টর জমি পানির নিচে। এছাড়া অনেক রাস্তা ব্যবহারের অচল হয়েছে। এতে পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। তাই দাম হুহু করে বেড়েছে বলে দেশটির সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হবু স্ত্রীর সাথে ছবি তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু যুবকের
লাহোর মার্কেট কমিটির সেক্রেটারি শাহজাদ চীমা এএফপিকে বলেন, প্রায় ৮০ শতাংশ টমেটো ক্ষেত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে পেঁয়াজের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। লাহোরে সবজি বিক্রেতা মুহাম্মদ ওয়াইস জানান, সবজির প্রচুর দামের কারণে তিনি ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, খাবারের প্রচুর দাম বাড়ায় লোকেরা কিছু না কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
বন্যার আগে পাকিস্তান ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির মুখে পড়ে। এর ওপর আঘাত হানে বন্যা। এতেই চরম বিপাকে দেশটি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।