আর কিছুক্ষণ পরই চাঁদের উদ্দেশে পৃথিবী ছেড়ে যাবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নতুন মহাকাশ যান স্পেস লঞ্চ সিস্টেম। সোমবার (২৯ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৩ (বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩) মিনিটে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এসএলএস নাসার তৈরি এ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশ যান।
চাঁদে মানুষ প্রথমবারের মতো পা রাখে ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ রকেটে চড়ে। ওই ঘটনার অর্ধ শতাব্দী পরের এই উৎক্ষেপণ নাসার জন্য একটি বড় ঘটনা হতে যাচ্ছে। ওরাইয়নকে চাঁদ এবং একে ছাড়িয়ে মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে ৪২ দিনের জন্য। এর ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৫ সালে মধ্যে আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে নাসা’র।
আশা করা হচ্ছে, এটি পৃথিবীতে ফিরে আসবে ১০ অক্টোবর। ক্যালিফোর্নিয়া স্যানডিয়েগোর কাছে প্রশান্ত মহাগরে অবতরণ করবে। আর্টেমিস-২-এ প্রথম মনুষ্যবাহী মিশন পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২০২৪ সালে। আর আর্টেমিস-৩ ২০২৫ সালের আগে চাঁদে যাবে না।
আরও পড়ুন: ফুলের রাজ্য চেরাগি পাহাড়
এসব মহাকাশযাত্রার জন্য নাসা এখনো কোনো মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করেনি। আর্টেমিস নামের এই রকেট একটি ক্যাপসুল বহন করবে। এই ক্যাপসুলের নাম ওরাইয়ন। এই ওরাইয়ন চাঁদের চারপাশে পরিভ্রমণ করবে। তবে এই যাত্রায় কোনো মানুষ থাকবে না। যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলে পরবর্তী মিশনগুলোতে মহাকাশচারীরা যোগ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এই এসএলএসটি উৎক্ষেপণ করা হবে। যাত্রা শুরুর পর যানটি দু’ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ত্যাগ করবে। নাসার এক্সপ্লোরেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্টের সহযোগী প্রশাসক জিম ফ্রি বলছেন, ‘পর্যালোচনা থেকে আমরা কোন নেতিবাচক ফলাফল পাইনি। এবং এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন ভিন্নমতও তৈরি হয়নি।’
পুরো রকেটের ৯০ শতাংশই জ্বালানি দিয়ে ভর্তি। এটি ৪০ লাখ কেজি থার্স্ট (ধাক্কা) উৎপাদন করতে সক্ষম। ৩২২ ফুট উঁচু এ রকেটটি উৎক্ষেপণের পর বিভিন্ন পর্যায়ে এটির নানা অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সর্বশেষ অরিয়ন স্পেসক্রাফটি চাঁদকে আবর্তন করে পাক খাবে। মোট ৪২ দিন ধরে এ মিশনটি চলমান থাকবে।
উৎক্ষেপণের দুই মিনিট পর সলিড বুস্টার জোড়া খুলে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পড়বে। আট মিনিটের মাথায় রকেটের মূল অংশটিও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এরপর একবারের জন্য পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে অরিয়নসহ রকেটের বাকি অংশটি। ফ্লাইটের ৯০ মিনিট সময় অরিয়ন চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করবে।
এ মিশনে অরিয়ন স্পেসক্রাফটি চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে না। কিন্তু এটি চাঁদকে একটি বড় কক্ষপথে কেন্দ্র করে ঘুরবে। আর এখন পর্যন্ত মানুষের চড়ার উপযোগী করে বানানো কোনো স্পেসক্রাফটের এটাই হবে মহাকাশের সবচেয়ে দূরে যাওয়ার ঘটনা। এ মিশনে কোনো মানুষ না থাকলেও হেলগা, জোহর, ও মুনিকিন ক্যাম্পোস নামক তিনটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ম্যানিকিন রেখেছে নাসা। এত দীর্ঘ ভ্রমণে এদের ওপর কী কী প্রভাব পড়বে তা পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যাবে মানুষ নভোচারীরা এ ধরনের মিশনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন।