চুরির অভিযোগে ছেলের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে শাসন করেন মা। শাসন করতে গিয়ে মায়ের বেদম পিটুনিতে মারা যায় ছেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভড়কে গিয়ে পরামর্শ করেন ভাইয়ের সাথে। পরে মা ও মামা মিলে নিহতকে লটকে দেন ঘরের সিলিংয়ের সাথে, আর প্রচার করেন আত্মহত্যা বলে।
তবে, শেষ রক্ষা হয়নি, ছেলেকে হত্যার দায়ে ও সহযোগিতার দায়ে মামাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর আদালতে দেয়া জবানবন্দী থেকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য। চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা।
নিহত মো. হাছান (১৪) নগরীর পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেনের (৪২) ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায়। গ্রেপ্তার দুজন হলেন- হাসানের মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলাম (২৪)।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে মা কুলসুম বেগম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর। একদিন আগে সোমবার রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, চুরির অভিযোগ পেয়ে কিশোর বয়সী ছেলের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন মা। শাসন করতে গিয়ে মায়ের বেদম পিটুনিতে প্রাণ যায় ছেলের। সেই খুনের ঘটনা আড়াল করতে ছেলের লাশ ঝুলিয়ে রাখে বাসার চালের লোহার রডের সঙ্গে।
এরপর প্রতিবেশি ও পুলিশকে জানায়, তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আর এ কাজে মাকে সহযোগিতা করেছে তার ভাই অর্থাৎ নিহত ছেলের মামা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হয়ে মা ও মামাকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই ঘটনার নেপথ্যের রহস্য উদঘাটন হয়।
পুলিশ জানায়, হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন।
বেলাল হোসেন জানান, তার ছেলে হাছান চট্টগ্রাম নগরীর চার নম্বর রুটের বাসের চালকের সহকারী হিসেবে একসময় চাকরি করত। কিন্তু বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর কুলসুম তাকে দৈনিক ১৫০ টাকা বেতনে হাটহাজারী উপজেলায় একটি কুলিং কর্নারে চাকরি নিয়ে দেন। ওই কুলিং কর্নারটি কুলসুমের বাবার।
মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে কুলসুমের ভাই ফারুক বাসায় গিয়ে জানায়, ছেলে হাছান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে বেলাল দ্রুত কুলসুমের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। এর আগেই স্থানীয় লোকজন বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। আকবর শাহ থানা পুলিশ ঘটনা তদন্তে নামে।
ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন আমরা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।’