১৯৮২ সালে তিন সন্তান রেখে নিখোঁজ হন একলিমা বেগম। এরপর কীভাবে পাকিস্তানে পৌঁছান তা নিজেও জানেন না। পাকিস্তানের শিয়ালকোটে রয়েছে তার আরেক পরিবার। দ্বিতীয় সংসারে রয়েছে তার আরও চার সন্তান। একলিমার ইচ্ছা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার মাতৃভূমিতে আসা।
১৯৮২ সালে তিন সন্তান রেখে নিখোঁজ হন একলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা সেসময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান মিলেছে একলিমার। বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থান করছেন তিনি।
৬৫ বছর বয়সই একলিমা বেগম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে। পরিবারের সূত্রমতে, বাংলাদেশে থাকাকালে স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন একলিমা। এরপর একদিন সে অবস্থাতেই হারিয়ে যান।
দীর্ঘ ৪১ বছর পর পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে খোঁজ মিলেছে তার। কীভাবে তিনি সেখানে পৌঁছালেন সেটি অবশ্য কেউই বলতে পারছেন না। একলিমা নিজেও জানেন না তিনি কীভাবে পাকিস্তানে পৌঁছান। তিনি শুধু তালার গঙ্গারামপুর গ্রাম ও এবং বাবা-মা ও ভাইয়ের কথাই মনে করতে পারেন।
যেভাবে মিলল সন্ধান
একলিমা এখন পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে থাকেন। সেখানে রয়েছে তার আরেক পরিবার। দ্বিতীয় সংসারে তিনি আরও দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। সেখানেই পরিবারের কাছে একলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরিবারের সদস্যরা তার সেই ভিডিওবার্তা ধারণ করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন।
তাদের পোস্ট করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকির শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো নিজের দাদা-বাবা ও চাচাদের সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে ভিডিওর একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।
একলিমা বেগমের ছোট ভাই ইব্রাহিম শেখ জানান, ‘সেসময় আমাদের অনেক অভাব ছিল। বোনের স্বামী মারা গেলে সে যেন প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। পরে কীভাবে যে পাকিস্তানে চলে গেল, তা আমরা কেউই জানি না। কয়েকদিন আগে তার খোঁজ পেয়েছি। আমরা চাই সে ফিরে আসুক।’
একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকির শেখ বলেন, ‘কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফু একলিমার খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হচ্ছে। তিনি আমাদের এখানে আসতে চান। এজন্য তাদের কাছে ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অ্যাম্বাসি সহযোগিতা করলে তিনি আসতে পারবেন।’
দুই দেশে একলিমার দুই পরিবার
জাকির শেখ জানান, ‘ফুফুর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি শুরুতে পাকিস্তানের একটি সেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দুটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে রয়েছে। আমরা চাই তারা এখানে বেড়াতে আসার সুযোগ পাক। এজন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি।’
একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে বাংলাদেশে। ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়। দুই মেয়ে দুই মেয়ে রমেছা বেগম ও নাছিমা বেগম। বড় মেয়ে রমেছা বেগম এখন পার্শ্ববর্তী হরিঢালী ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। ছোটমেয়ে নাছিমা বেগমের শ্বশুরবাড়িও একই গ্রামে। তিনি এখন সেখানে রয়েছেন।
একলিমার বাংলাদেশে থাকা ছেলে হেকমত আলী বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় আব্বাকে হারিয়েছি। আমার মারে এত বছর পরে পেয়েছি। তারে আপনারা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। আমি সারাজীবন তাকে দেখাশুনা করব।’
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে কেউ জানায়নি। তবে এমন ঘটনার বিষয়ে কাজ করার জন্য অনেক সংস্থা রয়েছে। থানায় যোগাযোগ করলে একলিমাকে দেশে আসার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
সূত্র: দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড