চিরায়ত সময়ের পরিক্রমায় ইতি ঘটছে ১৪৪৩ হিজরি বর্ষের। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন হিজরি সন ১৪৪৪। মুহাররমের নবচন্দ্রের আবির্ভাবের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত সুরে প্রকম্পিত হচ্ছে “আহলান, সাহলান শাহরুল মুহাররাম” বাণী। এ সুরের মোহনায় দুলে সমগ্র সৃষ্টি।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর ঐতিহাসিক হিজরতকে উপজীব্য করে হিজরি নববর্ষের উৎপত্তি। মুসলমান-মুমিন মাত্রই যা অনুমেয় ছিলো আড়ম্বরপূর্ণ, ঈমান দুর্বলতা-দীনতায় তা হয়েছে নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ! মুমিন হৃদয় আজ আনন্দিত হয় ঈসায়ী নববর্ষে, উৎসবমুখর হয় বাংলা নববর্ষে, তবে আত্মসংস্কৃতি হিজরি নববর্ষের ক্ষেত্রে তা হয় ম্রিয়মান। আপন সংস্কৃতির বিস্মৃতিতে আমাদের দুর্বলতা যেমন প্রকাশ পায়, অনুরূপ নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, তাহজিব-তামাদ্দুনের চর্চা ব্যতিরেকে ভিনদেশী সংস্কৃতির লালন উদগ্রীব পাওয়া যায়।
একজন বাঙালি হিসেবে যেমন বাংলা নববর্ষে আমরা উৎসবমুখর হই, তেমনি একজন মুসলমান হিসেবে হিজরি নববর্ষে উচ্ছ্বসিত হওয়াটাও কি উদ্দিষ্ট নয়? যতটা উৎসুক হয়ে বাংলা নববর্ষে বন্ধু-স্বজনদের মাঝে শুভেচ্ছার আদান-প্রদান করি, তেমন উদ্দীপনায় কেন হিজরি নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করছি না? ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাঙালি যেমন সত্য, তার থেকে আরো সত্য আমরা মুসলমান।’
উল্লেখ্য যে, হিজরি বর্ষপঞ্জি অন্য বর্ষপঞ্জির মতো নয়। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলে আমাদের চোখের পাতায় ভেসে ওঠে সেই ত্যাগ-তিতিক্ষা আর সংগ্রামের ইতিহাস। পূর্ববর্তীদের এই ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে আমরা মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভে গভীর মনোযোগী হই। ভোগের জীবন ছেড়ে পরোপকারে নিয়োজিত হোক প্রতিটি হৃদয়; এমনটাই কাম্য। একজন মুসলমান হিসেবে হিজরি বর্ষের সূচনা, ইতিহাস, প্রচলন ও পঞ্জিকা অনুসরণে সজাগ হবো, এই প্রত্যাশায় হিজরি ১৪৪৪ নববর্ষের শুভেচ্ছা।
লেখক: নির্বাহী সদস্য, হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদ