এককভাবে কারও সুপারিশে কাউকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই : এমপি মোছলেম উদ্দিন উদ্দিন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সিনিয়র প্রতিবেদক॥

কেউ আমার নামে চেক নিয়ে থাকেন সেজন্য তিনি দায়ী নন। আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। কামাল উদ্দিন কিসের বশবর্তী হয়ে এই অভিযোগ করেছেন আমি জানি না।

এ ঘটনার পেছনে কারও কোনো ইন্ধন দিচ্ছে কি না, আমার রাজনৈতিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে কি না, এটা আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাকে খুঁজে বের করার অনুরোধ করছি।

আমার ন্যুনতম যদি কোনো অপরাধ থাকে, আমি যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। কারণ অনৈতিক কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা আমার নেই, দৃঢ়তার সঙ্গে আমি বলতে পারব।’

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৫ লক্ষ টাকার একটি চেক নিয়ে বিতর্ক হলে আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন চট্টগ্রাম ৮ আসনের এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।

এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাকে (কামাল উদ্দিন) কেউ আক্রমণ করে আবার আমার পেছনে লাগিয়ে দেবে। আপনারা জানেন, আমি জীবনে কোনোদিন একজন বডিগার্ড নিয়ে হাঁটি না। আমার নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। আমি এ ধরনের সন্ত্রাসী রাজনীতি জীবনে কোনোদিন করিনি।’

চট্টগ্রাম-৮ সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি এমপি হওয়ার পর আমার জায়গায় কেউ আসতে পারে কি না, এজন্য আমার বিরুদ্ধে অপবাদ তৈরির জন্য একটা হীন চক্রান্ত করছে কেউ অগোচরে। আমার মনে হচ্ছে, কারণ যে পোস্ট দিয়েছে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। তিনি কোনোদিন আমার কাছে এসে মনোনয়নের ব্যাপারে কথাও বলেননি। আমার সঙ্গে কখনো তার দেখাও হয়নি। অথচ তিনি দলের লোক বলে আমি জানি। অভিযোগ যদি থাকে, নিয়মমাফিক তিনি দলের হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু ফেসবুকে এগুলো দিয়ে আমার সঙ্গে দলকেও তো ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।’

দক্ষিণ জেলা সভাপতি ও সাংসদ মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতিকদের সমালোচনা সহ্য করতে হয় এবং আমরা সেজন্য প্রস্তুতও থাকি। তবে আমি জীবনে কোনোদিন ভূমিদস্যুগিরি করিনি, কোনোদিন মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি সন্ত্রাসকে লালন করিনি। আমার হাতে রক্তের দাগ নেই। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করার জন্য। ভুলভ্রান্তি আমার থাকতে পারে, আমার কার্যক্রমে সবাইকে হয়ত সন্তুষ্ট করতে পারিনি। কিন্তু আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছি, অনেকে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ধ্বংস হয়েছে। আমি যেন মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে পারি, একটি পদ যেন আমাকে অহঙ্কারী করে না তোলে। দুর্ভাগ্য, এই ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আছে। সেখানে জাতীয় নেতারা থাকেন। কমিটিতে জেলা প্রতিনিধি প্রয়োজন, কিন্তু সেটা উপেক্ষিত। আমরা জেলা থেকে শুধু সুপারিশ করতে পারি। মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করে। এবার একটি নিয়ম করে দিয়েছে কেন্দ্র থেকে- তৃণমূলের কমিটি ও জেলা পর্যায় বসে কমপক্ষে তিনজনের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সভা করেছি। সভায় যারা যারা প্রার্থী হতে চায়, তাদের মাইকের সামনে ঘোষণা করতে বলেছি। প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাইকের সামনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। প্রার্থীরা প্রত্যেকে বলেছেন, তারা মনোনয়ন চান। মনোনয়ন পেলে তারা নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করবেন। আবার এ-ও বলেছেন, তিনি মনোনয়ন না পেলেও প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে কাজ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করবেন।’

‘এরপর জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তিনজনের কথা থাকলেও আমরা পাঁচজন, এমনকি সাতজনের নামও পাঠিয়েছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যার নাম এক নম্বরে আছে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে চার নম্বর, পাঁচ নম্বরে আছে এমন ব্যক্তিও মনোনয়ন পেয়েছেন। সুতরাং এখানে এককভাবে কারও সুপারিশে, কাউকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়া কিংবা মনোনয়ন নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ নেই।’

মোছলেম উদ্দিনের নামে চেক নেওয়ায় অভিযুক্ত হোসেন কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, হোসেন কবির একটি মামলা করেছেন। এটা পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলেই, হোসেন কবির অভিযুক্ত হলে অবশ্যই আমরা দল থেকে ব্যবস্থা নেব।’

সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়নে জামায়াত নেতার ছেলেকে মনোনয়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মোমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লাহ চৌধুরীর নাম পাঠাইনি। আমরা পাঁচজনের নাম পাঠিয়েছিলাম। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রদীপ চৌধুরীর নাম এক নম্বরে ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের পক্ষে এর বাইরেও মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব। কারণ কেন্দ্র থেকেও দরখাস্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্র ফরম বিক্রি করে। যারা ফরম কেনেন, তারা বায়োডাটা জমা দিয়ে আবেদন করেন। আমরা প্রথমে জেনেছি যে প্রদীপ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আবার পাল্টে রুহুল্লাহ চৌধুরীর নাম এসেছে। দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের সাহেবের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানিয়েছেন। সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও লিখিতভাবে বিষয়টি কেন্দ্রকে জানিয়েছেন।’

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের ছবি প্রকাশিত হচ্ছে না বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, গতবছরের জুলাই থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণর বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন শুরু হয়। তখন সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সিআরবিতে হাসপাতালের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের ‘একহাত’ নেন।

এরপর থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ‘আচরণ’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সিআরবিতে একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষের লোক, আমাদের তো সরকারের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করা স্বাভাবিক। আবার কারও এটার বিরোধিতা করারও অধিকার আছে। কেন আমরা এটার পক্ষে থেকেছি, সেজন্য যদি পত্রিকাগুলো আমাদের বর্জন করে, ছবি ছাপাতে না চায়, তাহলে আমাদের ওপর অবিচার হয়ে যায়। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। আমি তার সিদ্ধান্তের পক্ষেই তো অবস্থান নেব। সরকারের পক্ষেই তো অবস্থান নেব, যেহেতু আমিও সরকারের অংশ, আমি সবসময় সরকারের পক্ষে থাকব, এটাই তো স্বাভাবিক।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের স্থাপন কালুরঘাট বিপ্লবী বেতারকেন্দ্রে স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের দাবি করে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও চেয়েছেন ওই এলাকার সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।

প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এম হোসেন কবির সাংসদ মোছলেমের নামে ১৫ লাখ টাকার চেক নেন।

স্ট্যাটাসে কামাল উদ্দিন ১৫ লাখ টাকার একটি চেকের ছবিও যুক্ত করে দেন। এটি সোনালী ব্যাংক কোর্ট হিল শাখার একটি চেক। তাতে পে টু–এর স্থানে লেখা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। নিচের অংশে কামাল উদ্দিনের সই রয়েছে। তবে চেকে কোনো তারিখ ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে এমপি মোছলেম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। বরং এ ধরনের অভিযোগের নেপথ্যে তিনি তার এমপি পদ নিয়ে চক্রান্ত চলছে বলে সন্দেহ করছেন।

এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও মোহাম্মদ ইদ্রিস, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, পৌর মেয়র জহুরুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়া, দক্ষিণ জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি এস.এম বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.